ঢাকা: দেশের বড় আমদানিকারকরা ভোগ্যপণ্য বোঝাই করে ৩৫০টি লাইটার জাহাজ ভাসমান গুদাম বা ফ্লোটিং ওয়ার হাউজ হিসেবে ব্যবহার করছে। এমনকি ২০ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত পণ্য খালাসের স্থানে আটকে রাখা হচ্ছে জাহাজগুলো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি হয়েছে। সাগরে ও নদীতে যেসব লাইটারেজ জাহাজ ভাসছে, সেগুলোর অধিকাংশই ভোগ্যপণ্য বোঝাই, যেগুলো রমজান উপলক্ষে আমদানি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সেসব পণ্য বাজারে গেলে দাম নিম্নমুখী হয়ে যাবে, এ আশঙ্কা থেকে আমদানিকারকেরা সেসব পণ্য খালাস না করে লাইটারেজ জাহাজে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু এমন অবস্থা চলতে থাকলে পণ্যের দামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। জাহাজে পণ্য মজুদ রেখে যে ব্যয় হচ্ছে তা ভোক্তার কাছ থেকেই আদায় করা হবে।
এদিকে মাদার ভেসেলগুলো (বড় জাহাজ) থেকে যথাসময়ে ভোগ্যপণ্য খালাস না করায় বহির্নোঙরে বাড়ছে বড় জাহাজের সারি। অন্যদিকে লাইটার জাহাজে পণ্য রাখায় প্রতিদিন আমদানিকারকদের মাশুল গুনতে হচ্ছে। এ কারণে আকস্মিক ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ মাদার ভেসেলগুলোতে গম, ডাল, সরিষা, লবণ, সয়াবিন ভুষি, রড, এইচ আর কয়েল, কয়লা, পাথর, বিভিন্ন ধরনের সারসহ আরও নানা আমদানি পণ্য আছে। লাইটারেজ জাহাজের অভাবে মাদার ভেসেলগুলো অপেক্ষমাণ থাকায় এর গড় অবস্থানকাল বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিটি জাহাজের পরিচালন ব্যয় বাবদ দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার গচ্চা দিতে হচ্ছে। লাইটার জাহাজগুলোতেও পণ্য রাখলে প্রতিদিন মাশুল নেন মালিকরা। পরে এর প্রভাব পড়ে ভোগ্যপণ্যের ওপর। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত ফি না থাকায় লাইটার জাহাজ মালিকরা যে যেভাবে পারছেন, মাশুল আদায় করছেন। তাই দৈনিক মাশুল ফির সংখ্যাটা জানাতে রাজি হননি লাইটার জাহাজ মালিকরা। এ অবস্থায় বিদেশি জাহাজগুলোর এদেশীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর কারণে ও রমজানের জন্য খাদ্য পণ্য আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে ৪০টিরও অধিক মাদার ভেসেল অপেক্ষমাণ রয়েছে। তবে এসব মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস ও পরিবহনের ক্ষেত্রে লাইটার জাহাজের সংকট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় লাইটার জাহাজের সংকট কাটাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে প্রায় দুই হাজার লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও পরিবহন করা হয়। এর সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল। তারাই প্রতিদিন বার্থিং সভা করে মাদার ভেসেলের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সম্প্রতি বহির্নোঙরে মাদার ভেসেলের বিপরীতে পর্যাপ্ত লাইটারেজ জাহাজের বরাদ্দ দিতে পারছে না সংস্থাটি। ফলে বহির্নোঙরে পণ্য খালাসে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বন্দরের পরিসংখ্যান বলছে, সরকার ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় এবার আমদানিকারক ও ভোগ্যপণ্যের আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে। গত বছর রমজানকে ঘিরে ২১৪ আমদানিকারক ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছিলেন। এবার আমদানি করেছেন ৩৬৫ জন। অনেক আমদানিকারকের নিজস্ব কোনো গুদাম না থাকায় এসব পণ্য জাহাজেই রেখে দেওয়া হয়েছে। এখনো অনেক আমদানি পণ্য পাইপলাইনে রয়েছে। বর্তমানে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোতে গম, ডাল, সরিষা, লবণ, কয়লা, পাথর, স্ল্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।
এদিকে লাইটারেজ জাহাজের বিদ্যমান সঙ্কট নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মকসুদ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাহাজ মালিকদের সংগঠন, শিপিং এজেন্ট, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কমডোর মকসুদ আলম সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে লাইটারেজ জাহাজে পণ্যগুদাম হিসেবে রাখাকে দায়ী করেন। তিনি আমদানিকারকদের লাইটারেজ জাহাজগুলো খালি করে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে ওই বৈঠকের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বর্তমানে দুই হাজারের বেশি লাইটার জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে আমদানিকারক কর্তৃক প্রায় ৩৫০টির মতো লাইটার জাহাজ পণ্য বোঝাইরত অবস্থায় নৌপথের বিভিন্ন স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ জাহাজে খাদ্যপণ্য আছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ৪০টির বেশি মাদার ভেসেল পণ্য নিয়ে অবস্থান করছে। পর্যাপ্ত লাইটারেজ জাহাজ না পাওয়ায় বহির্নোঙরে মাদার ভেসেলের জট তৈরি হচ্ছে। অনেক আমদানিকারক লাইটারেজ জাহাজকে গুদাম বানিয়ে এসব পণ্য জাহাজে রেখে দিচ্ছেন। তারা এসব পণ্য নিজস্ব গুদাম কিংবা গন্তব্যে নিয়ে খালাস না করায় জাহাজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
মাকসুদ আলম বলেন, সরকার যেখানে রোজায় ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করতে আমদানি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে এমন অচলাবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। আমদানিপণ্য গুদামে না নিয়ে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করার মাধ্যমে কোনো সঙ্কট তৈরির অপচেষ্টা এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য সব আমদানিকারককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করতে হবে এবং কোনো ক্রমেই লাইটার জাহাজকে ভাসমান গুদাম বা ফ্লোটিং ওয়ার হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। দ্রুত লাইটার জাহাজগুলো ছেড়ে দিতে হবে৷ যাতে কোনো লাইটের সংকট না হয়। এর সঙ্গে পণ্যের দামের একটা সম্পর্ক রয়েছে। যত দ্রুত লাইটার পরিবহন করবেন প্রান্তিক পর্যায়ে পণ্যের দাম ততো কম থাকবে।
তিনি বলেন, যারা আমদানি পণ্য জাহাজে গুদাম বানিয়ে রেখেছেন মনে করা হচ্ছে তাদের গুদাম নেই। তাহলে জাহাজ ভাড়া বাবদ যে খরচ তা তো ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করা হবে। ফলে আমদানি বেশি হলেও বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এজন্য কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখভাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক আইনানুগ নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে৷ জাহাজে গিয়ে তাদের প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব আমদানিকারক আছে তাদের তালিকা করছি। যাতে ভবিষ্যতে তাদের সক্ষমতার বেশি আমদানি করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। আমরা সবাইকে দেশ ও মানুষের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।
২০২৩-এর নভেম্বরে গমবোঝাই করে খালাস ২০২৪-এর নভেম্বরে!
লাইটার জাহাজ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জাহাজ জড়ো হয় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। মাদার ভেসেলের ড্রাফট বেশি হওয়ায় এসব জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। এ কারণে ৩০ ভাগ ফিডার জাহাজের সাহায্যে কনটেইনার আনা হয় বন্দর জেটিতে। সেখানে চলে খালাস প্রক্রিয়া। বাকি ৭০ ভাগ পণ্য বাল্ক জাহাজ থেকে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে খালাস করে ৩৮টি নৌরুটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। লাইটার জাহাজের ধারণ ক্ষমতা এক হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত। এভাবে বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বছরে প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার লাইটার জাহাজ পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। আমদানিকারকরা পণ্য খালাস না করে প্রায় ২০ শতাংশ লাইটার জাহাজকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই হিসাবে প্রায় ৩৫০টি লাইটার জাহাজ বর্তমানে ভাসমান গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এসব জাহাজে গম, ভুট্টা, ছোলা, ডাল, সরিষা, সয়াবিনের বীজ, সিমেন্ট, বালু, ক্লিংকারসহ অন্য পণ্য রয়েছে।
লাইটারেজ জাহাজ কাদিরিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী শফি বলেন, মাসখানেকের বেশি সময় ধরে লাইটার জাহাজগুলোতে পণ্য রেখে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছিলেন আমদানিকারকরা। এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই আমদানিকারকরা এমনটা করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমদানিকারকরা ভোগ্যপণ্যে কৃত্রিমসংকট তৈরির জন্য লাইটার জাহাজগুলো গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন এটা সত্য। এখানে পণ্য আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে এটা করে থাকে। দেশে পণ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য লাইটার জাহাজগুলোকে বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে এনে ফেলে রেখেছে, পণ্য খালাস করছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের মোট ১৮০০ লাইটার জাহাজ রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ লাইটার জাহাজ ভাসমান গুদামে পরিণত হয়ছে। একটি জাহাজে এক থেকে তিন হাজার টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করে। এসব জাহাজে গম, ভুট্টা, ছোলা, বুট, ডাল, সয়াবিন বীজ, সরিষা, ক্লিংকার আছে।
তিনি বলেন, বছরের অন্যান্য সময় সীমিত পরিমাণে ভোগ্যপণ্যের আমদানি হওয়ায় আমদানিকারকেরা দ্রুত পণ্য খালাস করতেন। রমজানের কারণে পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, পাশাপাশি আমদানিও অনেক বেড়েছে। তাই লাইটার জাহাজের চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু জাহাজেই পণ্য মজুত করে রাখায় অন্যান্য পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে বহির্নোঙরে বড় জাহাজগুলোর অপেক্ষমাণ সময় বেড়েছে। ডব্লিউটিসিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে, সেভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছে।
নবী আলম বলেন, এতদিন অনেক অনিয়ম থাকলেও গত নভেম্বর থেকে আমরা একটা সিরিয়াল মেনে লাইটার জাহাজ চালাচ্ছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, যাদের শিল্পকারখানা আছে আবার নিজস্ব লাইটার জাহাজও আছে তারা সিরিয়াল মানছে না। ফলে তারা তাদের ইচ্ছামতো লাইটার জাহাজে পণ্য লোড আনলোড করে থাকে। আমাদের কাছে এমন ঘটনাও আছে ২০২৩ সালের নভেম্বরে জাহাজে গম বোঝাই করে খালাস করেছে ২০২৪ সালে নভেম্বরে। এতে গম পোকায় ধরেছে, পচে গেছে। সেই গম এখন আমাদের খাওয়াচ্ছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, একটা জাহাজ যদি তিন মাস পণ্য বোঝাই করে বসে থাকে তাহলে আমাদের বেতন ভাতা আটকে থাকে। আগে ওয়াটার সেলের ডেমারেজ ফি ছিল, এখন সেটা নাই। এই কারণেই আমদানিকারকরা ইচ্ছাকৃত পণ্য খালাস না করে জাহাজগুলোকে গুদাম বানিয়ে রাখছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বরাদ্দ ও পরিচালনা নিয়ে নবগঠিত ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং (আইভোয়াক) সহ-সভাপতি পারভেজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে কোনো জাহাজে পণ্য গুদামজাত করা হয় না। তবে কোনো আমদানিকারক যদি পণ্য আমদানি করে তখন মাদার ভেসেল থোকে লাইটার জাহাজে করে পণ্য বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর বেশিরভাগ যায় নারায়ণগঞ্জের দিকে। সেখানে যদি কোনো লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য ইচ্ছাকৃত বা অইচ্ছাকৃত পণ্য খালাসে দেরি হয়, তখন সেটা ২০ থেকে ২৫ দিনের বেশি সময় লেগে যায়। এটাকেই অনেকে বলে জাহাজে পণ্য গুদামজাত করছে। বাস্তবতা হচ্ছে কিছু আমদানিকারকের কাছে বেশ কিছু লাইটার জাহাজ ব্লকেড বা বুকড যেটাই বলেন আছে, এটা সত্য। একেকজন আমদানিকারকের কাছে ৩০ থেকে ৪০ টার বেশি লাইটার জাহাজ ব্লকেড আছে, সব মিলিয়ে ৩০০ বেশি হবে। যেহেতু জাহাজ ব্লকেড আছে তাই অনেকেই বলছে দ্রব্যমূল্যে কারসাজি করার জন্য করা হচ্ছে। তবে এটার যথার্থতা আমি বলতে পারবো না।
তিনি বলেন, গত নভেম্বর থেকে লাইটার জাহাজগুলো সিরিয়াল মেনে চলছে। তার আগে বেশ কিছু দিন সিরিয়াল মানেনি। মোংলাতে যখন মাদার ভেসেল বেশি আসে তখন লাইটার জাহাজের ভাড়া বেড়ে যায়। এজন্য জাহাজ মালিকরা সিরিয়াল মেনে চলতে চায়। কারণ পণ্যের চাহিদা থাকুক আর না থাকুক তারা নির্দিষ্ট একটা রেটে ভাড়া পেয়ে থাকে।
পারভেজ আহমেদ বলেন, গত নভেম্বর থেকে ডাবল ট্রিপ ভাড়া নেই। ডাবল ট্রিপ মানে ২২ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর যদি জাহাজ থেকে পন্য খালাস না করে তাহলে ডাবল ট্রিপ ভাড়া দিতে হয়। আর ২২ দিনে মধ্যে ১০ দিন পর থেকে বিভিন্ন স্লাবে ডেমারেজ ফি দিতে হয়। আর প্রতিটি জাহাজ মেট্রিকটন ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা। একটি জাহাজ এক হাজার টন থেকে ৩ হাজার টন পণ্য পরিবহন করে থাকে। সে হিসেবে এক হাজার টন জাহাজের ভাড়া পড়বে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ২২ দিনে খালাস না করলে সেটা দিতে হবে ২১ লাখ টাকা। এটা সারা বিশ্বে পণ্য পরিবহণে কোথাও ডাবল ট্রিপ ভাড়া নেই। সেজন্য আমদানিকারকরা এটা নিয়ে আপত্তি করলে সরকার সেটা উঠিয়ে দিয়েছে। তবে ডেমারেজ রেট এখনও আছে। শুধু রেট কখন কত হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়নি। এজন্যই অনেকেই বলছে ডাবল ট্রিপ না থাকা ও ডেমারেজ রেট নির্ধারণ না থাকায় আমদানিকারকরা ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করছে না। তারা সে সুযোগটা নিচ্ছে, এ বিষয়টা সত্য।
লাইটার জাহাজকে তিন দিনের মধ্যে বন্দর জলসীমা ত্যাগের নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র ও বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, কিছু লাইটার জাহাজ পণ্য লোড করে ভাসমান অবস্থায় কিছু দিন থাকতো, এই বিষয়টা আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমরা পত্রিকাতে সম্প্রতি একটা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি যে, কোনো লাইটার জাহাজ মাদার ভেসেল থেকে পণ্য লোড করার তিন দিনের মধ্যে বন্দর জলসীমা ত্যাগ করবে। তারা এখানে ওয়েটিংয়ে থাকতে পারবে না। একই সঙ্গে এই নির্দেশনা নৌপুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রমজানে বাজারে যাতে কোনো রকমের কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য প্রশাসন থেকে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কোনো রকমের গাফিলতি নেই।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, কিছু আমদানিকারক লাইটারেজ বা ছোট জাহাগুলোকে ‘ভাসমান গুদাম’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেক লাইটারেজ জাহাজ আমদানি পণ্য নিয়ে সাগরে ও নদীতে ভাসছে। কিন্তু আমদানিকারকেরা এসব পণ্য খালাস করছে না। এছাড়া মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য লোড আনলোডে যদি ১৫ থেকে ২০ দিন সময় তাহলে বাজারে স্বাভাবিকভাবে একটা সংকট তৈরি হবে। এ সুযোগে তারা একটা বিশাল অঙ্ক পকেটে ঢোকাতে পারবে। কাজেই ভোগ্যপণ্যের আমদানি হলেই তো হবে না, সেটা পুরোটাই বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পণ্যের দাম বাড়বে। এজন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তর এবং বিআইডব্লিউটিএকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে হবে অসাধুদের জেল জরিমানার আওতায় আনতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট কমবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৫
জিসিজি/এইচএ/