ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১২, মে ২১, ২০২৫
সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে বিএনপির

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। একই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো ও ‘মানবিক করিডোর’ ইস্যুতেও সরকার ও বিএনপি দুই মেরুতে অবস্থান করছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মুখে প্রতিনিয়ত পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শোনা যাচ্ছে।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই, সেসব বিষয়ে তারা হাত দিচ্ছে, যেটা তাদের কাজ নয়। সরকারের মূল কাজ হচ্ছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা। কিন্তু নয় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কারসহ বেশ কিছু বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতানৈক্য দৃশ্যমান হয়েছে। সরকারের সঙ্গে যেসব বিষয় নিয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনের জন্য দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৯ মে রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সরকারকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করে কমিটি। তবে এই মুহূর্তেই সহিংস কোনো কর্মসূচি দেবে না দলটি, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর সঙ্গে নতুন করে বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার সিদ্ধান্তে সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। জোরালোভাবে সরকারের এসব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে দলটি।

বন্দর ও করিডোর প্রসঙ্গে বিএনপি বলছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান সরকার কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

গত ১৭ মে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বর্তমান সরকার জবাবদিহিতামূলক নয়। আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডোর কিংবা বন্দর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের সরকার।

পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য, তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সবকিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই, সরকার কিন্তু সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভিন্ন পক্ষ নানান দাবি নিয়ে হঠাৎ করে মাঠে নামায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অবনতিশীল। সংকট উত্তরণে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র পথ। তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন তারা। তবে নির্বাচন ইস্যুতে এখনই মাঠে নামার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেও অভিমত দেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের কেউ কেউ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু সরকারের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। অথচ যে বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর, যার সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদে হওয়া উচিত, সেই বিষয়গুলো অন্তর্বর্তী সরকার করতে যাচ্ছে।

এদিকে আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশন আদেশ জারির পরও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারেননি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ইশরাকের শপথ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ইস্যুতেও সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। শপথের দাবিতে সপ্তাহখানেক ধরে ‘ঢাকার সাধারণ ভোটার’ ব্যানারে আন্দোলন করছেন ইশরাকের অনুসারীরা। আন্দোলনের শুরুতে নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান, পরে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। অবস্থান কর্মসূচির সময়ে নগর ভবন থেকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রাও করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নগর ভবনে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।

যদিও তাকে মেয়র ঘোষণার গেজেট স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, যার শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিএনপির নেতারা মেয়র পদে ইশরাকের শপথ না হওয়ার জন্য সরকারের চক্রান্ত দেখছেন। তারা বলছেন, প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার ইশরাক।

যদিও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার জবাবে এবং ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গে বলেছেন,  ইশরাকের মেয়র হওয়া না হওয়ার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় আইনি জটিলতা রয়েছে। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে তো লাভ নেই। আদালতে যে আইনি লড়াই, সেটি লড়তে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মঙ্গলবার (২০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেন, ইশরাক হোসেনের মেয়র পদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক কাজ করছে।

তিনি বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের মতো এখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরেও মেয়র হতে দেওয়া হয়নি ইশরাককে। কোর্ট রায় দেওয়ার পরেও তাকে শপথ করানো হচ্ছে না। এখন সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক কাজ করছে সরকার। লুটপাট চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাককে মেয়র পদে বসতে দিচ্ছে না। কোর্টের আইন যদি কেউ না মানে, তাকে বন্য বা ফ্যাসিস্ট বলে। সরকার কি সেই লাইনে যাচ্ছে কি না, চিন্তার বিষয়।

টিএ/এমজেএফ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।