ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে বাঞ্ছারামপুরবাসীর কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই

সালাম ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১০
বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে বাঞ্ছারামপুরবাসীর কৃতজ্ঞতার যেন শেষ নেই

বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ফিরে: ১৬ ডিসেম্বর। বিকাল সোয়া কি সাড়ে চারটা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দুর্গারামপুর গ্রাম। গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা জুলেখা বেগম। ওইদিন সকালে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বিতরণ করা কম্বল না পেয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ তিনি। কিন্তু এরপরও বলতে ভুললেন না একটি কথা।

টিন দিয়ে তৈরি পেছনের বাড়িটি দেখিয়ে বললেন, ‘গরডা শাহ আলম সাবে (বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান) বানাই দিছে। ’

আরও বললেন, ‘হেয় এই গরডা তুলি দিছে দেইহাই অহন শান্তিতে ঘুমাই। আর সব সময় হের লাগি দুয়া করি। ’

‘আরো অনেকেরে দিছে। ’ বলেই আশপাশের কয়েকটি বাড়ির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন।

শুধু জুলেখাই নন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান নিজের খরচে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন এমন আরও অন্তত ৬০০ দুঃস্থ পরিবারকে।

এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ১৯৯৮-৯৯ সালে দুর্গারামপুর, আসাদনগর, পাহাড়িয়াকান্দি, বাঞ্ছারামপুর, ভিটিঝগড়ার চর, জগন্নাথপুর, দশদোনা, দরিয়াদৌলত, কদমতলী, উলুকান্দি ও হিজলিয়াকান্দির ছয় শতাধিক দুঃস্থ পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন।

দুর্গারামপুরের বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে কোথাও অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন চোখে পড়েনি। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবদুল মান্নান জানালেন, এলাকায় অস্বচ্ছল পরিবারগুলোতে ঘরসহ স্যানিটেশন ল্যাট্রিন তৈরি করে দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান।

এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, দুর্গারামপুর ও পাহাড়িয়াকান্দিতে পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ঘরসহ স্যানিটেশন ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আহবর সোবহান।

মূল কার্যক্রম সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আর্ত মানবতার সেবায় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের অন্যান্য কার্যক্রমও বেশ সাড়া ফেলেছে। এ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এলাকার দুঃস্থ ও গৃহহীন মানুষ, মেধাবী শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন।

উপজেলার মাদ্রাসাসহ ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি কাসের গরিব ও মেধাবী বিবেচনায় ১০ জন করে শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। এছাড়া এতিমখানায় খাবারের খরচসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আর্থিক অনুদানও দেওয়া হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, বাঞ্ছারামপুরের সোবহানিয়া ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানেরই গড়া। এ মাদ্রাসাসহ আশপাশের গ্রামগুলোর বিভিন্ন মাদ্রাসায় নিয়মিত অনুদান দিয়ে থাকেন তিনি।

দুর্গারামপুর, উলুকান্দি, হিজলিয়াকান্দি, পাহাড়িয়াকান্দি, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের মসজিদ তৈরি করে দেওয়া ছাড়াও বাঞ্ছারামপুর বাজারের মসজিদটির নির্মাণেও অবদান রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের। এসব মসজিদে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকেন।

মোশাররফ হোসেন জানান, দুর্গারামপুর, পাহাড়িয়াকান্দি, পাড়াতলী, আসাদনগর ও তদমতলীতে পাঁচটি ফ্রি ফ্রাইডে কিনিক চালিয়ে আসছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। এসব কিনিকে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র ও বিভিন্ন পরীক্ষার পাশাপাশি অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তায় এসব কিনিক থেকে অন্তত এক হাজার মানুষ চিকিৎসাসুবিধা নিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সম্প্রতি থানা সদরে ১০ বিঘা জমি কিনেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখানে মা ও শিশুদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্বলিত একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাহাজাহান জাতীয় পর্যায়ের বেশ ক’জন শিল্পপতির নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এ এলাকায় জন্ম নেওয়া শিল্পপতির অভাব নেই। কিন্তু কেউ এলাকার উন্নয়নে কাজ করে না। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান নিঃস্বার্থভাবে উপকার করে যাচ্ছেন বলে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হচ্ছে। ’

তিনি বললেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ এ এলাকার জন্য যা করতেছে, তার জন্য এলাকাবাসী চিরকৃতজ্ঞ। কারণ, এমপিরাও এতো কাজ করেন না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১.৩০ ঘণ্টা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।