নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ‘ফালতু’ হিসেবে পরিচিত সাজাপ্রাপ্ত তিন দুর্ধর্ষ আসামির সেবা নিচ্ছেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
সাকা চৌধুরীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী এই তিন ‘ফালতু’ প্রতিনিয়ত তার ফুট-ফরমায়েশ তো খাটছেনই, প্রয়োজনে ম্যাসেজ করছেন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর শরীর।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ কয়েদীদের ‘ফালতু’ নামে ডাকা হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে স্থানান্তরের পর থেকে এমনই তিন ‘ফালতু’র সঙ্গে সময় কাটছে সাকার। এসব ‘ফালতু’ প্রয়োজনে মনের আনন্দে ম্যাসেজ করছেন সাকার শরীর। কখনোবা মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনছেন সাকার গল্প, স্মৃতিকথা।
এছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত আর পত্রিকা পড়ে সময় পার করছেন বিতর্কিত এ রাজনীতিক।
গ্রেপ্তারের আগে মিডিয়ার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তীব্র ভাষায় গালাগাল করলেও কারাগারে বন্দী অবস্থায় তার কথাবার্তা ও আচরণ অনেক সংযত।
কারাসূত্র বাংলানিউজকে জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ভিআইপি ও ডিভিশনপ্রাপ্তদের জন্য পৃথক একটি ভবন রয়েছে। ওই ভবনে মোট ৪টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে মোট ৮ জনের বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যান্য সেল ও কয়েদখানার চেয়ে এ ভবনটি একটু অন্যরকম। কক্ষগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। রয়েছে সংযুক্ত বাথরুম। ভবনের বাইরে রয়েছে ফুলের বাগান। এখানে থাকলে প্রতিদিন দু’টি করে জাতীয় দৈনিক পান ভিআইপিরা। বর্তমানে সাকা চৌধুরী ছাড়া আর সব কক্ষ ফাঁকা রয়েছে।
কারা সূত্র আরো জানায়, সাকা চৌধুরীর সেবা করতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছে তিন ‘ফালতু’। তাদের সঙ্গে সাকা চৌধুরী রাজনৈতিক আলোচনা খুব একটা করছেন না। মনমেজাজ ভালো থাকলে শোনাচ্ছেন অতীত জীবনের নানা গল্প। তার বাচনভঙ্গী আর শব্দচয়নে পুলকিত মনে গল্প শুনছেন ‘ফালতুরা’।
বদ মেজাজী হিসেবে সাকা চৌধুরীর যথেষ্ট দুর্নাম থাকলেও কারাগারে ‘ফালতুদের’ সঙ্গে তিনি কোনো খারাপ আচরণ করছেন না বলেও জানা গেছে। কারা কর্মকর্তারাও মাঝেমধ্যে তার কাছে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গেও ভালো আচরণ করছেন সাকা। তারাও মুগ্ধ সাকা চৌধুরীর বয়ানে।
সাধারণত ভোর বেলাতেই ঘুম থেকে উঠে পড়ছেন সাকা। সকালের নাস্তা শেষে পত্রিকা পড়ছেন। এর মধ্যে কখনো সেলের ভেতরে, কখনোবা সেলের সামনের জায়গাতে পায়চারী করছেন। বন্দী ছাড়াও জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সাকা চৌধুরীর সঙ্গে গত শুক্রবার দেখা করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ওই সময়ে তার বড় ছেলে ফয়েজ কাদের চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তার বাবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা ভালো না। ঠিকমত কথা বলতে পারেন না। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়।
এ প্রসঙ্গে কারাসূত্র বাংলানিউজকে জানায়, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তরিত করার পরের দু’দিন সাকা চৌধুরী তার কক্ষ থেকে তেমন একটা বের হননি। সারাদিন তিনি কক্ষেই থেকেছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে তিনি বের হচ্ছেন। নিয়মিত হাঁটাচলা করছেন। তবে মাঝে মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারেন না। ওই সময়ে তিনি নিজ কক্ষে গিয়ে বসে বা শুয়ে সময় কাটান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার বদরুদ্দোজার সঙ্গে বুধবার দুপুর ২টায় যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি জানান, সাকা চৌধুরী কারাগারে ভালো আছেন। তার কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি কখা খুব কম বলছেন। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন তার অনুরোধ রাখতে। খাবার নিয়ে সাকা চৌধুরীর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি প্রায়শই বিমর্ষ ও চুপচাপ থাকছেন। কারা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন ছাড়া তার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলেছেন না। তার কোন প্রয়োজন হয়ে তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে ডাকছেন।
আগামী বৃহস্পতিবার সকালে তাকে যুদ্ধাপরাধের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করানোর কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১০