চট্টগ্রাম: ২০০৪ সালের বহুল আলোচিত দশট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার তদন্ত ২০১০ সালেও শেষ করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। এপর্যন্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১ দফা বাড়ানো হয়েছে।
প্রায় তিন বছর ধরে অধিকতর তদন্তের পর চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এ ঘটনার সঙ্গে বাবর-নিজামীর নাম যুক্ত হয়। এতে তদন্তকাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করা হলেও গত ২১ নভেম্বর আবারও তিন মাসের সময় বাড়ানোর আবেদন জানায় সিআইডি। এরই পরিপ্রেেিত আগামী ২২ ফেব্র“য়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
এর ফলে প্রায় সাত বছর আগের এ ঘটনার তদন্ত ‘শেষ হইয়াও হইলনা শেষ’ পর্যায়েই রয়ে গেছে বলে মনে করছেন মামলায় রাষ্ট্রপরে আইনজীবী ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ।
অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘একের পর এক রহস্য উম্মোচন হচ্ছে। আর তদন্তের নতুন নতুন দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এজন্য দিন তারিখ ঠিক করে বলা যাবে না কখন তদন্ত শেষ হবে। ’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘তদন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে চেষ্টা করব এবার যাতে আর সময় নিতে না হয়। ’
উল্লেখ্য ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএল’র জেটিতে খালাসের সময় ধরা পড়ে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান। এ ঘটনায় অস্ত্র আটক ও চোরাচালান আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় ২০০৮ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
অধিকতর তদন্ত শুরুর আগেই গ্রেপ্তার ছিলেন মামলার অন্যতম আসামি চোরাচালানি হাফিজুর রহমান। এ বছরের ৬ ফেব্রয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় ৪৩ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়ে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে হাফিজ এ মামলা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
এরপর দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে চার সদস্য আদালতে জবানবন্দী দেন। এদের মধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) ফররুখ আহমেদ, ২৬ সেপ্টেম্বর ডিআইজি (এসবি) শামসুল ইসলাম, ১৮ সেপ্টেম্বর এনএসআই’র সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুর রহমান এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এম সাব্বির আলী আদালতে জবানবন্দী দেন।
এদের মধ্যে এনামুর রহমান চৌধুরী তার জবানবন্দীতে সঠিক তদন্ত না হওয়ার জন্য এবং এনএসআইকে আড়াল করার জন্য সরাসরি বাবরকে দায়ী করেন।
এছাড়া গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)’র সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান চৌধুরী বীরবিক্রম এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব ড.শোয়েব আহমেদ জবানবন্দী দিয়ে মামলার তদন্তের মোড় আরেক দফা ঘুরিয়ে দেন।
জবানবন্দীতে ইমামুজ্জামান তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে উদ্ধৃত করে দশ ট্রাক অস্ত্র খালাসের বিষয়ে ‘জোট সরকারের হাইয়েস্ট অথরিটি’র অবগত থাকার কথা বলেন।
অন্যদিকে শোয়েব আহমেদ বলেন, দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন নিজামী।
এ সাতজনের জবানবন্দী পেয়ে সিআইডি আদালতের মাধ্যমে গত ৩ অক্টোবর বাবরকে গ্রেপ্তার দেখায়। এরপর তাকে দু’দফায় রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে আর কী রহস্য উদঘটিত হয়, কখন শেষ হয় এর তদন্ত কাজ এটাই বছর শেষে এখনও সবার কাছে কৌতূহলের বিষয় বলে মনে করেন অনেকেই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১০