ঢাকা : সারাদেশে নৌপথে সরকার ওয়াটার বাস চালুর পরিকল্পনা করছে বলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছেন। এজন্য বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে তিনি আরো জানান।
শাজাহান খান বলেন, ওয়াটার বাসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম এবং অল্প গভীরতায়ই তা চলাচল করতে পারে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌ দুর্ঘটনা রোধে নৌযানের রেজিস্ট্রেশনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, নৌ-দুর্ঘটনা রোধে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে চলাচলকারী নৌযানের রেজিস্ট্রেশনের উপর আমরা জোর দিচ্ছি। সকল নৌযানের ফিটনেস দেখে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত করার চেষ্টা করছি। এতে দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি প্রাণহানির আশঙ্কাও কম থাকে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০০৯ সালে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। এতে প্রাণহানির সংখ্যা ২৫৯ টি। পরের বছর ২০১০ সালে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯টি, মারা গেছেন ৭৫ জন।
শাজাহান খান বলেন, এ বছর দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের মধ্যে রেজিস্টার্ড জাহাজ ছিলো ১৭টি। এতে প্রাণহানি ঘটে ৬ জনের। পক্ষান্তরে এ বছর দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের মধ্যে আনরেজিস্টার্ড ছিলো ১২টি, এতে মারা যান ৬৯ জন। এ কারণেই আমরা শতভাগ রেজিস্ট্রেশনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
এই বছরেই বেশ কিছু রুটে ওয়াটার বাস চালু করা হবে জানিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা-বরিশাল, মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটেও ওয়াটার বাস চালু করতে চাই। ’
এই ওয়াটার বাসের একটা সুবিধা হলো ঝড়-তুফানে সহজে ডোবার আশঙ্কা থাকে না। যত্রতত্র চরে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। ৪/৫ ফুট পানিতেও চলতে পারে।
এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘আগ্রহীদের চাহিদা অনুযায়ি আমরা রুট দিতে পারবো। ’
মন্ত্রী জানান, আনন্দ শিপইয়ার্ড এরই মধ্যে চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ রুটে ওয়াটার বাস চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। আরো দুই-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
নৌ-পথকে সচল রাখতে নদী ড্রেজিংয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নৌমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একসময় মাওয়া রুটে পারাপারে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগতো। চর কেটে ড্রেজিংয়ের পর এখন এক থেকে দেড় ঘন্টায় পার হওয়া যাচ্ছে।
ড্রেজিংয়েও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করা হচ্ছে জানিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘ড্রেজারের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ১১টি ড্রেজার বেসরকারিভাবে কাজ করছে। আরো ড্রেজার আনা হচ্ছে। এজন্য আমি ১০/১২টি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। ’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি বেসরকারি সব মিলিয়ে দেশে ২০টি ড্রেজার আছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে আরো ৩টি ড্রেজার পাবো। ’
এদিকে বেনাপোল সীমান্তের স্থল বন্দরে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী জানান। একটি আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল, একটি আন্ত জেলা বন্দর বাস টার্মিনাল এবং একটি রফতানি বন্দর টার্মিনাল।
১৫ জানুয়ারি এই তিনটি টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। চলতি বছরের মধ্যে এ তিনটি বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
শাজাহান খান বলেন, এই টার্মিনাল তিনটি বিশেষ করে আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনালটি নির্মাণ হলে যাত্রীদের বিড়ম্বনা দূর হবে। ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করেই যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন।
বর্তমানে যাত্রীদেরকে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটতে হয় উল্লেখ করে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘যানবাহন সংকটের কারণে তাদের হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এইসব দিক চিন্তা করেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ’
এই তিনটি প্রকল্পে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, এর মধ্যে আন্তর্জাতিক যাত্রী বাস টার্মিনালের জন্য ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আন্তজেলা বন্দর বাস টার্মিনালের জন্যূ ৭ কোটি ৩৮ লাখ এবং রফতানি বন্দর টার্মিনালের জন্য ৮ কোটি খরচ হবে।
বাংলাদেশ সময় ২০০০ ঘন্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১০