ঢাকা: পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তদন্তাধীন গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর এক হাজার মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
এগুলো বছরের পর বছর মৃত মামলা হিসেবে পড়ে আছে।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, এ মামলাগুলোর অগ্রগতি যেমন থেমে গেছে, তেমনি আসামিদের গ্রেফতারেরও কোনো উদ্যোগ নেই। কবে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হবে, তাও জানেন না সংশ্লিষ্টরা।
তবে সিআইডি কর্মকর্তাদের দাবি, এ সব স্পর্শকাতর মামলা তদন্ত করতে অনেক পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। ফলে, যথাযথভাবে তদন্ত শেষ করতে একটু বেশিই সময় লেগে যায়।
পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলি ও পদোন্নতি পেয়ে অন্যখানে চলে যাওয়ায় মামলার জট দেখা দেয়। এছাড়া জনবলের তুলনায় মামলার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তদন্ত কাজ শেষ করতে দেরি হয়। ফলে, মামলার জট সৃষ্টি হয়।
সিআইডির বার্ষিক অপরাধ মনিটরিং প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সিআইডির হাতে মোট এক হাজার ৭৫৬টি মামলা তদন্তাধীন। এর মধ্যে এক হাজার ৩৬টি মামলা তিন বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে।
সিআইডির তথ্য মতে, বর্তমানে সিআইডিতে প্রায় তিন হাজার মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর বিপরীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র পাঁচশ জন। হিসেব করে দেখা গেছে, জনপ্রতি ছয়টি করে মামলার তদন্ত কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে তদন্ত কাজ শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন সিআইডি কর্মকর্তারা।
সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, যে কোনো মামলা তদন্তের জন্য অনেক পক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। নির্ভুলভাবে কাজ করতে গেলে সময় একটু বেশিই লাগে।
তবে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন মামলার জট কম বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ করে সিআইডি।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, অপহরণ, গুম ও হত্যাসহ গুরুতর অপরাধের প্রায় এক হাজার মামলার মধ্যে ৭৫৬টি মামলার কী অগ্রগতি হয়েছে, কর্মকর্তারা তা ঠিক জানেন না। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলা মনিটরিং সেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিআইডির মোট নয়টি বিভাগ অপরাধী ও অপরাধকে শনাক্তকরণে কাজ করে। বিভাগগুলো হচ্ছে- ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যুরো, ফুট প্রিন্ট ব্যুরো, হ্যান্ডরাইটিং ব্যুরো, ব্যালেস্টিক ব্যুরো, মাইক্রো অ্যানালাইসিস ব্যুরো, কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস ব্যুরো, জালনোট শাখা, ফটোগ্রাফিক ব্যুরো, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) আশরাফুল ইসলাম বলেন, মামলা ইতোপূর্বে আরো বেশি ছিল; তা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে কিছু মামলা অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হচ্ছে।
এ ছাড়া হত্যা, খুন, মানি লন্ডারিং, হুন্ডি ব্যবসা, কিডন্যাপিং ও রেমিট্যান্স জালিয়াতির মতো ঘটনার মামলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সময় বেশি লাগছে। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ বলে পাঁচ শতাধিক মামলা মনিটরিং করার জন্য জোর তাগিদও দিয়েছে। এসব মিলিয়ে একটা সাময়িক চাপ তৈরি হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তও মনিটরিং করা হচ্ছে।
দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪