ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘ভুলুয়া রয়েল সিটি’ নামে আবাসন প্রকল্প জমি ক্রয় না করেই অধিকাংশ প্লট বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকায় অবস্থিত বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে ভুলুয়া রয়েল সিটি প্লট বিক্রি করছে।
এসবের প্রতিবাদ করায় অনেককেই ভুলুয়া রয়েল সিটির নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাড়িয়াছনি, নাওড়া, গজারিয়া ও বাগবের মৌজায় ভুলুয়া রয়েল সিটি তাদের আবাসন প্রকল্পের নামে ছয় শতাধিক বিঘা জমি দখল করে নেয়। এসব জমির বেশির ভাগই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক দখল করা।
জমিগুলো না কিনে জোরপূর্বক বালু ভরাট করে দখলে নিয়েছে ভুলুয়া রয়েল সিটির নিজস্ব সন্ত্রাসীরা।
বাড়িয়াছনি এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক আবদুল বাকি মিয়ার ১৫ শতাংশ, লেহাজউদ্দিনের ১৫ শতাংশ, বাচ্চু মিয়ার ৩৫ শতাংশ, আমির আলীদের সাত বিঘা, জলিলদের ১২ বিঘা, আমির হোসেনের ৪৫ শতাংশ, মানিক হাজিদের ৮ বিঘাসহ স্থানীয় অনেক কৃষকের চার শতাধিক বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে ভুলুয়া রয়েল সিটি।
প্রতিবাদ করায় এদের মধ্যে অনেকেই ভুলুয়া সিটির সন্ত্রাসীদের হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে হামলা ও মামলার শিকার হয়ে টাকা না পেয়েও নিজের জমি ভুলুয়া সিটির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেকে জমি বিক্রি করেননি। এসব জমি নিজেদের দখলে নিয়ে ভুলুয়া রয়েল সিটি প্লট বিক্রি করায় ফুঁসে উঠতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগী এসব কৃষক।
ভুলুয়া রয়েল সিটির নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের হামলা ও মামলার শিকার আবদুল বাকি বলেন, 'ভাই, কী আর বলব। আমার পৈতৃক সম্পত্তি ভুলুয়া রয়েল সিটি জোরপূর্বক বালু ভরাট করে দখলে নিয়েছে। প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে। তিন বছর ধরে মামলা চালিয়ে যাচ্ছি। '
অপর ভুক্তভোগী মিঠু খন্দকার বলেন, 'ভুলুয়া রয়েল সিটির লোকজন কৃষকদের জমি অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার সময় প্রতিবাদ করেছিলাম। তাই আমাকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় তারা। আজও আমি ওই মামলা চালিয়ে যাচ্ছি। '
মামলার শিকার রানা মিয়া, রোমান মিয়া, সফিকুল ইসলাম, সেলিমসহ অনেকেই জানান, ভুলুয়া রয়েল সিটির নিয়োজিত দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ভুলুয়া রয়েল সিটি এ পর্যন্ত এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে ৫০টির মতো মামলা দিয়ে শায়েস্তা করেছে। এলাকার দালালদের রুখতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠতে শুরু করেছেন। ভুলুয়া রয়েল সিটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় অবস্থিত বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বহুমুখী সমবায় সমিতির নাম প্রচার করলেও ভুলুয়া রয়েল সিটির পরিচালক ৫জন। এরা হলেন- তোফাজ্জল হোসেন মন্টু, মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফ আহাম্মেদ, জাহাঙ্গীর আলম ও জাহাঙ্গীর হোসেন। এরা সমিতির নাম ভাঙিয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন শত শত কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ভুলুয়া রয়েল সিটির পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন নিজেকে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বলেন, সমিতির এক হাজার ৩৫০ জন সদস্য ছাড়া অন্য কারো কাছে প্লট বিক্রি বা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। জমি দখল, মামলা, হামলার বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তবে সরকারি সম্পত্তি যদি কেউ দখলে নিয়ে থাকেন, তাহলে তা উদ্ধার করা হবে। '
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন বলেন, 'আমি সবে যোগদান করেছি। ভুলুয়া রয়েল সিটির বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। তবে তারা নিয়মবহির্ভূত কাজ করলে তা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ভুলুয়া রয়েল সিটিসহ বহু আবাসন প্রকল্প সাইনবোর্ড-সর্বস্ব। তারা জমির আইলে সাইনবোর্ড দাঁড় করিয়েই ক্রেতাদের কাছে প্লট বিক্রি করে থাকে। এতে করে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর জানান, ভুলুয়া সিটির ব্যাপারে অনেক দিন ধরে অভিযোগ পাচ্ছি। তাদের অনিয়ম, অব্যবস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৪