ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মানবাধিকার পর্যালোচনা প্রতিবেদন

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ বাংলাদেশ

সাইদ আরমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ বাংলাদেশ

ঢাকা: মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে অমানবিক আচরণ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা।



এ তথ্য জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ‘ইউনির্ভাসাল পিরিওডিক রিভিউ (ইপিআর) এর ওপর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নিয়ে মধ্যমেয়াদী (দু’বছর) এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনের। ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) ও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ মধ্যমেয়াদী এ প্রর্যালোচনা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সালের ৩ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য ১১টি বিশেষ সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রথম ইপিআর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নারীর অধিকার, নির্যাতন ও অমানবিকতা রোধ, দায়মুক্তির সংস্কৃতি পরিহার, সন্ত্রাস দমন তৎপরতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইপিআর চার বছর পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রথম ইপিআরে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে বাংলাদেশকে।

প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এছাড়া দুর্নীতি ও দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী।  

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দীপু মনি বিচার বহির্র্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের নীতিমালা ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালের মে মাসে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলেও তিনি একই কথা বলেন। কিন্তু বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছেই।

ইপিআরের পর থেকে গত দু’বছরে (২০১১ সালের ৩ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ২৭৯ জন বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

সংস্থা দুটি বলছে- বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেশন এগেইনস্ট টর্চার (ক্যাট) স্বাক্ষর করলেও তার সংজ্ঞা অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক ভাবে বিদ্যমান। দু’বছরে ১৪৭ জন এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন মারা গেছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও আইন থাকার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হয়নি বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০০৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ১৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৭০১ জন যৌতুকের কারণে নির্যাতিত ও ১৭৪ জন এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন।  

সংস্থা দুটি বলছে, সরকার হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও বাস্তবে তা মানছে না।

এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংস্থা দুটি বলছে- বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। সঙ্গে বাংলাদেশ যে সকল আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে সেগুলো বাস্তবায়নে স্থানীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিতে হবে।
 
এ প্রসঙ্গে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুঃখজনক হলো, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও স্বীকার করতে চায় না। সরকারের উচিত স্বীকার করে তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজা। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা জরুরি। তা না হলে বলতে হবে সরকার অপারগ। ’

মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তার পুনর্গঠন দরকার বলে মনে করেন সাবেক এই উপদেষ্টা। একই সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের মহাসচিব আদিলুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ইপিআর একটি আন্তর্জাতিক সনদ। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের ১৯২টি দেশ এখানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই ইপিআরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হলে সেটা জাতির জন্য লজ্জার হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। সমালোচনায় তোপে পড়তে হবে সরকারকে।


বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ১৮ ফ্রেব্রুয়ারি,  ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।