ঢাকা: পুঁজিবাজার কেলেংকারীর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সংশয়ে রয়েছেন। বাজার সংশ্লিষ্ট তিন ইস্যুর সংকটও কাটছে না।
প্রথমত: বুকবিল্ডিং সংস্কার না হওয়ায় ১৫ কোম্পানির বাজারে আসার পথ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত: অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারছে না এসইসি। তৃতীয়ত: তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তি কাটছে না।
শেয়ারবাজার কেলেংকারী অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৭ এপ্রিল রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে এ রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তাই রিপোর্টের তথ্যের গ্রহযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্টের বরাত দিয়ে কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ফলে শেয়ার ব্যবসায় জড়িত একটি শক্তিশালী মহল রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
সরকার ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত হিসেবে অভিযুক্তরা নানা কৌশলে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে শুরু করেছে। এতে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ১৫ কোম্পানি বাজারে আসার জন্য দেশে রোড শো হয়েছে। কোম্পানিগুলো নির্দেশক মূল্য নির্ধারণ করা সত্ত্বেও আইন সংস্কার না হওয়ায় বাজারে আসতে পারছে না। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসার অভিযোগে গত ১৯ জানুয়ারি এই পদ্ধতিটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
পরে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে গত ২১ মার্চ ও ২৮ মার্চ এসইসিতে দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে এসইসির পক্ষ থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএপিএলসি এবং বিএমবিএর নেতাদের কাছে সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে মতামত দিতে বলা হয়। কিন্তু বিএপিএলসির সভাপতি সালমান এফ রহমানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নেতারা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের পর তাদের মতামত দেবেন বলে জানান। এতে বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংস্কার ঝুলে যায়।
এরই মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে মতামতদানকারী সালমান এফ রহমানসহ একাধিক ব্যক্তির নামে অভিযোগ উঠেছে। সেক্ষেত্রে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কারে তাদের মতামত কতটা গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ফলে সরকারিভাবে এ রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে কোনো সমাধানে যেতে পারছে না এসইসি। এতে বাজারে শেয়ার সরবারাহ স্থবির হয়ে পড়েছে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কারের অপেক্ষায় ঝুলে থাকা কোম্পানিগুলো হলো -জিএমজি এয়ারলাইন্স, গোল্ডেন হারভেস্ট, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড সিøপওয়েজ লিমিটেড, অরিয়ন ফার্মা লিমিটেড, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস, সামিট শিপিং লিমিটেড, কেওয়াইসিআর কয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, কেয়া কটন মিলস, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, লঙ্কা-বাংলা সিকিউরিটিজ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস (হোটেল ওয়েস্টিন) ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেড।
এদিকে তদন্ত রিপোর্টে এসইসির একাধিক কর্মকর্তার জড়িত থাকার ক-ধা বলা হয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কমিশনকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে । কিন্তু সরকারিভাবে রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়ায় এসইসি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না এবং অভিযুক্তদের নিয়েই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
তৃতীয়ত: তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তদন্ত কমিটি গঠনের পর থেকেই সম্ভাব্য রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দীর্ঘ দুই মাস ধরে বাজারে নানা গুজব চলছিল। এতে বাজারও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
অবশেষে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট হস্তান্তর করলেও সরকারিভাবে তা এখনো প্রকাশ না করায় রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না। এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতিও ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহেমদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ না করায় এর মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে।
এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ওপর জন আগ্রহ (পাবলিক ইন্টারেস্ট) সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে এটা প্রকাশ না করা হলে তা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি হতেই পারে।
তিনি বলেন, যেহেতু সরকারি ভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হিসেবে এটি প্রকাশ করতে পারে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ১৮ এপ্রিল ২০১১