ঢাকা: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বর্তমান বিধান সংবিধানে বহাল থাকলে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকই হবেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে (সুপারসিড করে) তার অধস্তন একজনকে প্রধান বিচারপতি করায় এ বিষয়টি এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে মেনে নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। অনুরূপ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও।
যদিও গত মঙ্গলবার ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাদের অভিমতে বলেছেন, ‘সংসদ চাইলে প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার বিধান বাতিল করতে পারবে। এক্ষেত্রে সংসদের স্বাধীনতা রয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের আগে বিচারপতি কেএম হাসানের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিএনপির প্রতি তার সুবিদিত আনুগত্যের অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। পরিস্থিতি বিরূপ হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা হতে অপারগতা প্রকাশ করেন কেএম হাসান।
সে সময় রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলেও তাতে সংকটের সমাধান হয়নি। বরং নতুন করে অবিশ্বাস দানা বাঁধে এবং সহিংসতা ও রক্তপাতের পথ খুলে যায়। রাজপথে রক্তারক্তি শুরু হওয়ার পটভূমিতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন। গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সংবিধানের ৫৮ গ(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের আগে সর্বশেষ অবসরগ্রহণকারী প্রধান বিচারপতিই হবেন প্রধান উপদেষ্টা। তাকে পাওয়া না গেলে এর আগে অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হবেন। ওই প্রধান বিচারপতিকেও পাওয়া না গেলে বা তিনি সম্মত না হলে নির্বাচনের আগে সর্বশেষ অবসরগ্রহণকারী আপিল বিভাগের বিচারক হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান। তাকেও যদি না পাওয়া যায় তবে এর আগে যিনি অবসরে গেছেন তিনি হবেন উপদেষ্টা।
এ চারটি ক্ষেত্রেও যদি প্রধান উপদেষ্টা পাওয়া না যায়, তবে রাষ্ট্রপতি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন।
এ দফাও যদি কার্যকর না হয়, তবে রাষ্ট্রপতি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরে যাবেন আগামী ১৭ মে। তার আগে অবসরে গিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম।
আপিল বিভাগের বর্তমান বিচারপতিদের মধ্যে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এ বছর ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তার আগে অবসরে গিয়েছেন বিচারপতি মো. আবদুল মতিন।
এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিকভাবেই আমরা এর মোকাবেলা করব। ’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এম জহির বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি খুব বিভ্রান্তিকর (কনফিউজিং)। কারণ প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক নিজেই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিচারকদের রাখা উচিত না। ’
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন- ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ বাতিল করার বিষয়টি সংসদের হাতে থাকবে। ’
ড. জহির বলেন, ‘তিনি (প্রধান বিচারপতি) নিজে যদি এ বিষয়ে এ রায় দিতে পারেন, তাহলে কেন তিনি প্রধান উপদেষ্টা হবেন? আবার আরেকটি বিষয় হলো- যদি সংসদ বাতিল না করে তাহলে তো অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে হবে। ’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে কথা বলতে চাইলে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে যতো দূর জানি তিনি (এবিএম খায়রুল হক) কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে রাজি হবেন না (অ্যাজ আই নো হিম পার্সোনালি, হি উইল নেভার এগ্রি টু বি দ্য হেড অব কেয়ারটেকার গভার্নমেন্ট)। কিন্তু (সংসদ চাইলে) সেটা এখন ভবিষ্যতের বিষয়। দেখা যাক কী হয়!’
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১১