ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

গ্রাহকের টাকা ফেরতে সিটি ব্যাংকের গড়িমসি

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
গ্রাহকের টাকা ফেরতে সিটি ব্যাংকের গড়িমসি

ঢাকা: সিলেটের জিন্দাবাজার শাখার ম্যানেজার মুজিবুর রহমান টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেও গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিন্দাবাজার শাখায় ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ৭০ লাখ টাকা এফডিআর (হিসাব নং-৪১২২১৮৯৪০৫০০১) করে পরের দিন লন্ডনে চলে যান সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার পাহাড়িয়া উত্তর পীর মহল্লার সৈয়দ আখলাক মিয়া।

আখলাক মিয়ার মূল এফডিআরকে লিয়েন রেখে ঋণ হিসাব খুলে পরিচালনা করেছেন জিন্দাবাজার শাখার ম্যানেজার মুজিবুর রহমান। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা দল ঋণ হিসাবটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া আপত্তি তুললে এফডিআরটি নগদায়ন করে ঋণ হিসাব সমন্ধয় করেন ম্যানেজার।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রবাস থেকেই এফডিআরের হিসাব জানতে সিটি ব্যাংকের জিন্দাবাজার শাখায় চিঠি দেন আখলাক। জাবাবে ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় তার এফডিআর একাউন্টটি ক্লোজ করা হয়েছে।

বিষয়টি জানার পর লন্ডন থেকে আবারো চিঠি দিয়ে এফডিআর ক্লোজড’র কারণ ও টাকা ফেরত চান আখলাক। পরে বিষয়টি ধামাচাপ‍া দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এদিকে প্রতারণার মাধ্যমে এফডিআর আত্মসাত করায় ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং দ্রুত টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয় দি সিটি ব্যাংক। গ্রাহকের হিসাবমতে পাওনার পরিমাণ সুদ-আসলে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৫৭লাখ টাকা পরিশোধও করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।  
এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে আমানতকারীদের জন্য ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টির প্রয়াস বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।  

তিনি বলেন, দিন দিন ব্যাংক কর্মকর্তাদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। ব্যাংকের বড় বড় কর্তা ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে, অথচ তাদের বিচার হচ্ছে না। নিচের লেভেলের কর্মকর্তারা ভাবেন, আমরা এতো কষ্ট করি। কোনো মূল্যায়ন নেই, প্রমোশন হচ্ছে না, টাকা আত্মসাত করেছেন।  

আর এভাবে টাকা তুলে আত্মসাৎ করায় দিন দিন ব্যাংকখাতের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা কমে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তৎকালীন ম্যানেজার মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলায় ২ নম্বর আসামি করা হয় গ্রাহক আখলাক মিয়াকে।

আদালত একই বছরের ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট কার্যালয়কে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’জন কর্মকর্তা ওই বছরের ৮ ও ১২ নভেম্বর সিটি ব্যাংকের জিন্দাবাজার শাখা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঋণ হিসাব খোলা, লেনদেন পরিচালনা করার সঙ্গে গ্রাহকের কোনো সর্ম্পক নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দলের কাছে শাখার ম্যানেজার স্বীকারও করেছেন গ্রাহকের এফডিআর ব্যবহার ও স্বাক্ষর জাল করে ঋণ হিসাব পরিচালনার দায় দায়িত্ব তার বলে জানিয়েছেন।  

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আখলাক মিয়ার নামের উণ হিসাব খোলা, লেনদেন পরিচালনা করা, এফডিআর নগদায়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টগুলোতে প্রদত্ত গ্রাহকের স্বাক্ষরের সঙ্গে ব্যাংক শাখায় রক্ষিত গ্রাহকের স্বাক্ষরের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

এতে বলা হয়েছে, তা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করতো, ব্যাংকিং রীতিনীতি, নিয়মাচার লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গ্রাহকের এফডিআর নগদায়ন ও গ্রাহকের হিসাব হতে অর্থ স্থানান্তর করে সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

টাকা আত্মসাতের সঙ্গে গ্রাহকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জেনেও কেন টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স নাজমুল আরিফ খান বাংলানিউজকে বলেন, আখলাক মিযাকে ৫৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ম্যানেজারের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে ন‍া।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।