ঢাকা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪শ’ ৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ২২ হাজার ৩শ’ ৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এসএমই ঋণ খেলাপি হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৯শ’ ২৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
দেশে কার্যরত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণকৃত মোট এসএমই ঋণের ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশই খেলাপি। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই খাতে বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪শ’ ৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ’ ৯২ কোটি ৬ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হয়েছে ১০ হাজার ৭শ’ ৮৭ কোটি ৩ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৮শ’ ৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের নন পারফর্মিং ঋণের পরিমাণ ৩শ’ ৪৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২শ’ ৬৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ২শ’ ৬১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭শ’ ৪৯ কোটি ৪১লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসএমই ঋণ ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৬৯ হাজার ৬শ’ ৬৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনা করা হলে দেখা যায় এরমধ্যে ৬৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশই বিতরণ করা হয়েছে অনুৎপাদনশীল খাতে।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকগুলো ১৭ হাজার ৭শ’ ৩০ কোটি ৪১ লাখ, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ৯শ’ ৯৭ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ২০১৫ সালের একই সময়ে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ১৫ হাজার ৮৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ হাজার ৭শ’ ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন কয়েকটি ব্যাংক চলতি অর্থবছরে তাদের বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। নন পারফর্মিং ঋণ বৃদ্ধি পেলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য বাণিজ্যিক শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ সুদের হার বৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলে।
তবে ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৪ হাজার ৬৩ কোটি ২লাখ টাকা। ৪২ লাখ টাকা কমে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৩ কোটি টাকা।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১শ’ ৬৪ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৫৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে দাঁড়িয়েছে ৩৯শ’ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে ১৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত বছরের পর্যন্ত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে দাঁড়িয়েছে ৩৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় এ খাতের খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর: ১, ২০১৬
এসই/এমজেএফ