ঢাকা: নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ফজলে কবির। অস্বাভাবিক অনিয়মের কারণে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কনফারেন্স হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন গর্ভনর।
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে এটি তার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে দেশে বর্তমানে ৩৩টি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় কর্মকর্তা ও পরিচালকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে নানা অনিয়ম করছেন। ঝুঁকিতে ফেলেছেন গ্রাহকের আমানতও।
এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে গর্ভনর বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর অবস্থানে থাকবে। অনিয়মের সাথে জড়িতদের কঠোর ফল ভোগ করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ প্রায় ৮ শতাংশ যা মোটেই সন্তোষজনক নয়।
ফজলে কবির বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ঋণ ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঋণ প্রদানে অনিয়ম, শ্রেণিকৃত ঋণকে অশ্রেণিকৃত ঋণ হিসেবে দেখানোসহ বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি এসব অনিয়মের সাথে ব্যবস্থাপনা পরিচালকেদর সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। ফলে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠানে তা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। মাত্রাতারিক্ত অনিয়মের কারণে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান গর্ভনর।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাজারে ধার্যকৃত সুদহারের চেয়ে অযৌক্তিকভাবে বেশি সুদ আরোপ করবেন না। মনে রাখবেন, আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানে সুদহার তহবিল ব্যয়ের ৫ শতাংশের বেশি হওয়া সমীচীন নয়।
বিনিয়োগ সর্ম্পকে গভর্নর বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ শিল্পখাতে ৪৩ শতাংশ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৮ শতাংশ ও হাউজিংয়ে ১৭ শতাংশ। কিন্তু কৃষিতে দুই শতাংশেরও কম। তাই এখাতে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাসেল নীতিমালা অনুযায়ী (ব্যাকিং-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ব্যাসেল কমিটির নীতিমালা) কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম আবশ্যকীয় মূলধন তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের নিচে। শিগগিরই এই মূলধন ১০ শতাংশের উপরে উন্নীত করতে হবে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন সরকার বলেন, বিমা কোম্পানিগুলোর ডিপোজিটের ২ শতাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়টি বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআইরএ’কে জানানো হবে বলে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এসই/এমজেএফ