বুধবার (৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর কয়েকটি ব্যাংকের আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, অনুমোদিত মাত্রার তুলনায় বেশি হারে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। ঋণ যেহারে বাড়ছে সেই হারে আমানত বাড়ছে না। এজন্য তারল্য কমে যাচ্ছে। এটি প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। ঋণ বিতরণের অনুমোদিত মাত্রা কমিয়ে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে। সেই তুলনায় রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়ছে না। এজন্য চলতি হিসাব ভারসাম্যে বড় অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণে রপ্তানি ও রেমিটেন্স বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সার্ভিস চার্জ কমিয়ে প্রতি লেনদেনে সর্বোচ্চ ২০ টাকা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ডলারের বিক্রয় মূল্য সমহারে নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শেয়ার হোল্ডাররা শেয়ার কেনাবেচা করেন। এতে কেউ বেশি শেয়ার কিনে এজিএম বা বোর্ড সভার মাধ্যমে পরিচালক হতেই পারেন। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে বা সুশাসনের অভাব থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখে এবং দেখছে।
সভা সূত্র জানায়, সাধারণ ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। যার ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হচ্ছে। আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।
এ প্রসঙ্গে এসকে সুর চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ বাড়তে পারে। কিন্তু বর্তমানে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এতে তারল্য সংকট হতে পারে। এজন্য ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) কমানো হতে পারে। আগামী মুদ্রানীতি ঘোষণায় এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এসকে সুর চৌধুরী জানান, ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে সব ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি না প্রয়োজনী পণ্য আমদানিতে অর্থায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের কর্মী নিয়োগে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি নেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো দাবি করেছিল। সেই দাবি নাকচ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতি নিয়ে পর্যালোচনা এবং আগামী মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাইবার হামলার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতি তিন মাস পরপর এ ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর। এতে সকল ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ, আমদানি-রপ্তানি, ডলারের বিনিময় মূল্য, রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
২০১৬ সালের শুরুতে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় বড় পরিবর্তন হয়। আকস্মিকভাবে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে বড় পরিবর্তন আসে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেও একই প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে বড় পরিবর্তন আসে। সংশ্লিষ্টরা এটাকে ‘ব্যাংক দখল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ওই দুই ঘটনায় এমডিরাও চাকরি হারিয়েছেন। আরও কয়েকটি ব্যাংকে এ ধরনের পরিবর্তনের গুজব রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এসই/এমজেএফ