ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

খুনি ডালিমকে এবি ব্যাংক থেকে অর্থ দিয়েছেন মোরশেদ-ফয়সল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
খুনি ডালিমকে এবি ব্যাংক থেকে অর্থ দিয়েছেন মোরশেদ-ফয়সল এম মোরশেদ খান ও ফয়সল মোরশেদ খান তাদের অপকর্মে ব্যবহার করেছেন এবি ব্যাংককে!

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ডালিমকে অর্থ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান এবং তার ছেলে ফয়সল মোরশেদ খানের বিরুদ্ধে। দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ— বিদেশে অর্থপাচার, বিএনপিকে অর্থযোগান এবং ডালিমের মেয়ের কাছ থেকে বাড়তি দরে জমি কেনার নামে বঙ্গবন্ধুর ওই বিদেশে পলাতক খুনির কাছে অর্থ সরবরাহের অপরাধ ঢাকতেই দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক ‘এবি ব্যাংকে’ অস্থিরতা তৈরি এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হককে সম্প্রতি অপসারণে কলকাঠি নেড়েছেন তারা।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু হলে বিভিন্ন অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান এবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফয়সল। সেসময় মোরশেদ খানদের ডেউন্ডি ও নয়াপাড়ার চা বাগানে কর্মরত ছিলেন ওয়াহিদুল হক।

এই বিশ্বস্ত ওয়াহিদুল হককে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও। কিন্তু এবি ব্যাংকে অস্থিরতা তৈরির প্রেক্ষাপটে গত ২১ ডিসেম্বর  ফয়সলের ৩৫ বছরের এ বিশ্বস্ত হাতকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার চলাকালে খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ডালিমের মেয়ে স্বস্তি হকের কাছ থেকে রাজধানীর ৭১৯ সাতমসজিদ রোডের একটি বাড়ি বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনে নেয় এবি ব্যাংক। ট্রেনিং একাডেমির নামে এই জমি কেনার ক্ষেত্রে ফয়সল বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ওই অতিরিক্ত অর্থ মেয়ের মাধ্যমে খুনি ডালিমের কাছে পৌঁছানো হয়।

বিএনপিকে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে মোরশেদ খানের ছেলের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। জানা যায়, চট্টগ্রামের জাহাজ ব্যবসায়ী মাহিন লস্করের প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজকে প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় এবি ব্যাংক থেকে। কিন্তু এ ঋণের সিংহভাগই বিদেশে পাচার হয় বলে তথ্য রয়েছে। ঋণগ্রহীতা এই মাহিন চট্টগ্রাম বিএনপির অর্থ যোগানদাতা বলে পরিচিত। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মাহিন এন্টারপ্রাইজের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ স্বল্প সময়ের মধ্যে উত্তোলন করা হয়, যা বিএনপির জ্বালাও-পেড়াও আন্দোলনের পেছনে ব্যয় করা হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়সল মোরশেদ বিভিন্ন সময় এবি ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। তার নির্দেশে ইউরো কার, এটিজেড, রহিম আফরোজ, সিমেট সিটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে এই বিপুল অংক ঋণ আকারে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ইউরো কারকে দেড় কোটি ও এটিজেডকে দেওয়া হয় এক কোটি ডলার, এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ঠিকানার সঙ্গে মোরশেদ খানের সিঙ্গাপুরের ঠিকানার মিল রয়েছে। রহিম আফরোজকে দেওয়া প্রায় ৫০ লাখ ডলার চলে গেছে ভারতে। আর দুবাইয়ের সিমেট সিটিকে প্রথমে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হলেও পরে সমালোচনার মুখে দুই কোটি ডলার স্থানান্তর হয়, কিন্তু বাকি ৯০ লাখ আর পরিশোধ করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ওই দুই কোটি ডলার লেনদেন মূলত মোরশেদ খানের মেয়ের জামাতা সাইফুল হকের প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের তদারকিতে সম্পন্ন হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়, ফয়সল মোরশেদ এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হককে সম্প্রতি অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আরও অর্থপাচারের জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু একসময়ের ঘনিষ্ঠ ওয়াহিদুল হক তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকেই সরিয়ে দেন ফয়সল।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।