বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার (০৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক মো. আলমগীর। গবেষণা দলে ছিলেন বিআইবিএম’র সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, প্রভাষক মো. আব্দুল হালিম এবং ইসলামিক ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) পরিচালক (গবেষণা) ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মো. মিজানুর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ইসলামিক বন্ড সুকুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরবে। দেশটি ইসলামিক বন্ড সুকুকের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ তাদের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে সুকুক বন্ড। ২০১৮ সালের সবশেষ হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বের ইসলামিক বন্ড সুকুকের প্রায় ৩৩ শতাংশ মালয়েশিয়ার শেয়ার। এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই, জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে দেশটির। আবার বৃহৎ মুসলিম দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও ইসলামিক ব্যাকিংয়ের অধিকাংশ পরিমাপকে পেছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন বাংলাদেশের মূল ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে ৮টি ইসলামিক ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। একইসঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭টি উইন্ডো ইসলামিক ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে যাতে আগামী দিনে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সুকুক বন্ড খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশ ঘুরে কিভাবে চালু করলে এ বন্ডটি জনপ্রিয় হবে তা খতিয়ে দেখছে। তিনি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করার ওপর জোর দেন।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের মোট শেয়ারের ২২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। তবে এতো বড় শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত প্রডাক্ট নেই। ছোট ছোট ঋণ দেওয়ার জন্য সেই ধরনের বহুমুখী প্রডাক্ট তৈরির ওপর জোর দেন। এতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কমবে।
সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ইসলামিক ব্যাকিংখাতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন নতুন ইসলামিক পণ্য তৈরি করতে হবে। যা গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি কমে যাবে। তিনি সাধারণ ব্যাংকিং এবং ইসলামিক ব্যাংকিংকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন।
এছাড়াও এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. হায়দার আলী মিঞা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৮
এসই/জেডএস