ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

জিয়া চ্যারিটেবল মামলা

খালেদাসহ তিন আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন ৭ এপ্রিল

স্পেশাল ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
খালেদাসহ তিন আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন ৭ এপ্রিল

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ০৭ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ জামিনে থাকা তিন আসামির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

অন্য দু’জন হচ্ছেন- জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান। এজন্য তাদেরকে ওইদিন আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।    

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) ৩২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা।

বেলা ১১টা থেকে প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে হারুন-অর রশিদের জেরা শুরু হয়। সাক্ষীকে আসামি মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে অসমাপ্ত জেরা করেন তার আইনজীবী টিএম আকবর। আসামিপক্ষ তাদের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী থাকবেন না বলে জানান। পরে ০৭ এপ্রিল আসামির ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করে তাদেরকে হাজির থাকতে বলেন।

দুই মামলায়ই খালেদা জিয়ার পক্ষে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিতির জন্য আবেদন জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও আব্দুর রেজ্জাক খান। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে খালেদার আবেদনের উল্লেখ করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানান তারা।  

আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর ও মামলা স্থগিতের আবেদন নামঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দেন।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য করেন ০৭ এপ্রিল।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। অন্য আসামি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

তাদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষে হাজিরা দেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির আছেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

২০১৪ সালের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এমআই/টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।