ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

‘সংসদ নির্বাচন বর্জনের খেসারত দিচ্ছে বিএনপি’

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৬
‘সংসদ নির্বাচন বর্জনের খেসারত দিচ্ছে বিএনপি’

ময়মনসিংহ: দলীয় প্রতীকে দ্বিতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গোটা দেশের মতো ময়মনসিংহেও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ময়মনসিংহের ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছেন বিএনপি’র প্রার্থী।

 

দলকে প্রতি পদে পদে গত সংসদ নির্বাচন বর্জনের কঠিন খেসারত দিতে হচ্ছে বলে মত খোদ বিএনপির বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মীর।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ব্যালটের মধ্য দিয়েই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আরো এক দফা কঠিন জবাব দেওয়া হয়েছে বলে মত ক্ষমতাসীনদের। আর এ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করছেন ময়মনসিংহের ভোটাররা।

ময়মনসিংহের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতা ও কারচুপির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোট দিয়েছেন। বিএনপিও মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়নি। ফলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

ভোটের ফলাফলের পর বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত পাওয়া গেছে।

দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বৃহস্পতিবার দেশের ২৩ জেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘাত, সংঘর্ষ ও ৮ জন নিহত হলেও ব্যতিক্রম ছিলো ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলার ইউনিয়নগুলো। ২০টি ইউনিয়নের ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩টি কেন্দ্রে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। বাকি ইউনিয়নগুলোতে নির্বিঘ্নে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএনপির প্রার্থীরা শুরু থেকে ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোটসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুললেও নির্বাচনের দিন এসব অভিযোগ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নারী-পুরুষ ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন।

ভোট চলাকালে ও গণনার সময়ও বিএনপির প্রার্থীরা কারচুপি বা ভোটকেন্দ্র দখলের কোনো অভিযোগ করতে পারেননি। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া গৌরীপুর ও তারাকান্দার ২০ ইউনিয়নেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের এ দাবি পূরণ না হওয়ায় গত সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় দলটি।

ভোটারদের মতে, তৃণমূলে নৌকা ও ধানের শীষ- জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে কোনো প্রতীক এগিয়ে রয়েছে এ বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ইউপি নির্বাচন ছিলো মোক্ষম হাতিয়ার।

স্থানীয় অচিন্ত্যপুর ইউনিয়নে বিজয়ী হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। বাকি ৯টি ইউপিতেও জয় পেয়েছে আ’লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এ ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে আলাপ হয় একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে।

এমন ফলাফলই প্রত্যাশিত ছিলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি সংসদেও নেই, বিরোধী দলেও নেই। এ দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করলে এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে না। এ কারণেই নৌকার জোয়ারে ধানের শীষ ডুবে গেছে।

ভোটদানের পর অচিন্ত্যপুর মোড়লবাড়ি এলাকার ১০৫ বছর বয়সী ভোটার আরফান উদ্দিন বাংলানিউজের বলেন, মাথায় বাড়ি দিলেও নৌকায় ভোট দিমু।

কম্পিত ঠোঁটে তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটের মাধ্যমে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে তার ফয়সালা হয়ে গেছে। নানা অজুহাতে বিএনপি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলো। সেই জবাবও খালেদা জিয়া পেয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা-কর্মী বলেন, দলকে প্রতি পদে পদে গত সংসদ নির্বাচন বর্জনের কঠিন খেসারত দিতে হচ্ছে। নিজেদের মধ্যকার গ্রুপিং ও একাধিক প্রার্থী এ নির্বাচনে দলকে ডুবিয়েছে। দলের জনপ্রিয়তাও নিয়েও সতর্ক সংকেত দিচ্ছে।

তারাকান্দার কাকনি ইউনিয়নের দুই ভোটার আব্দুস সোবহান ও রহিম শেখ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে অযৌক্তিক আন্দোলন বিএনপির জনপ্রিয়তায় চিড় ধরিয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে না হেঁটে, পেট্রোল বোমার অন্ধকার রাজনীতি সাধারণ ভোটাররা ভুলে যায়নি। আরও একবার ব্যালটের মাধ্যমেই বিএনপিকে ‘না’ বলেছি তাই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৬
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।