ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

পদ তাদের প্রাপ্যই ছিল

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৬
পদ তাদের প্রাপ্যই ছিল

ঢাকা: প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের নবীণ, প্রবীণ-সবার ভূমিকা যখন হতাশাব্যাঞ্জক তখন অপেক্ষাকৃত সক্রিয়, শিক্ষিত, মেধাবী, পরিশ্রমী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের তরুণদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বদ্ধপরিকর। এখন পর্যন্ত ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির ৪১টি পদে তার এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।



এদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব  রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের উত্থান রীতিমত বিস্ময় জাগানিয়া বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে বিএনপির বেশিরভাগ নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষি ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, নীতিনির্ধারকদের অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচির কারণে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বিএনপির যে ক’জন নেতা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে ‘বড়’ পদের যৌক্তিক দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের মধ্যে এরা অন্যতম।

সূত্রমতে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্থানটাই সব চেয়ে বেশি বিস্ময়কর মনে করছেন দলটির বড় একটি অংশের নেতা-কর্মীরা।

অত্যন্ত ‘ভদ্র’, ‘মার্জিত’, ‘ক্লিন ইমেজ’-এর পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যাপক ‘সুনাম’-এর অধিকারী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদটিই ছিল তার সব চেয়ে বড় পদ। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর প্রথম আলোচনায় আসেন ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতি করা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির দুর্দিনের কাণ্ডারি প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর গত পাঁচ বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে দলে নিজের অবস্থান শক্ত করে নেন তিনি।

গত ৬ বছরে বিএনপির রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দুতে চলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিরোধী দলের মহাসচিব হিসেবে সব চেয়ে বেশি বার গ্রেফতার হয়েছেন। সব চেয়ে বেশি দিন কারাগারে থেকেছেন।

ফলে দলের বড় একটি অংশের সক্রিয় বিরোধিতা সত্তেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর আস্থা রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর বিএনপির চতুর্থ ক্ষমতাধর ব্যক্তি এখন রুহুল কবির রিজভী।
 
দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের উত্থানও বিস্ময়কর বলে মনে করছেন অনেকেই। ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতে সংস্কারপন্থীদের বলয়ে নিত্য আসা-যাওয়া ছিল সাবেক এই বাম ছাত্র নেতার।
 
কিন্তু গত ৬ বছর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাহারা দিতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়ে আস্থাভাজন হন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। ফলশ্রুতিতে তারেক রহমানের জন্য সৃষ্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি এখন তার।
 
জানা গেছে, রিজভীর এ উত্থানে দলের অনেক শীর্ষ নেতাই বিস্মিত। আবার কেউ কেউ বলছেন, ছয় বছর ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাহারা দিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদটির জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন তিনি। সুতরাং তার এই পদপ্রাপ্তিতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
 
হাবিব ‍উন নবী খান সোহেল ছিলেন বি‌এনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক, দলের অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।
 
বয়সে তরুণ হলেও প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে এসব পদে দায়িত্ব পালন করে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর বিএনপির এ অঙ্গ সংগঠনের চেহারা বদলে দেন তিনি।   এরই পুরস্কার হিসেবে ২০১৪ সালে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করা হয় তাকে।
 
কিন্তু পরিস্থিতি নিজের অনুকুলে না থাকায় তেমন কিছু করতে পারেননি তিনি। গত দুই বছরে বেশিরভাগ সময় আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে তাকে। তার পরও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। এই পদের জন্য আশি ও নব্বই দশকের প্রায় ডজন খানেক ছাত্রনেতা দেন-দরবার করলেও পদ পেয়েছেন সোহেল।
 
‘এক নেতার এক পদ’ সিদ্ধান্তে অনড় থেকেও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব, দলের স্বেচ্ছাসেবব বিষয়ক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবীব উন নবী খান সোহেলকে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
 
বিএনপির সাংগঠনি সম্পাদক শামা ওবায়েদের উত্থানেও বিস্মিত হয়েছেন দলটির কোনো কোনো নেতা।
 
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে শামা ওবায়েদকে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
 
তবে দলের বেশির ভাগ নেতাই মনে করছেন, বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি ও তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখ-ভাল করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন শামা ওবায়েদ।
 
এ ছাড়া মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে নিজের সাংগঠনিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আর এর পুরস্কার হিসেবেই পেয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। সুতরাং তার উত্থানে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা চেয়ারপারসন বার বার বলেছেন। এখন পর্যন্ত ঘোষিত কমিটিতে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। যোগ্যরাই পদ পাবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
জেডএম/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।