ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

হতাশ বিএনপিতে অবহেলিতরা

মান্নান মারুফ, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
হতাশ বিএনপিতে অবহেলিতরা

ঢাকা: কাউন্সিলের পর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়ে গেছে। মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদবিতে মনোনীতদেরও নাম ঘোষণা শেষ।

বাকি কেবল স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা ও নির্বাহী কমিটি। আংশিক কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের মধ্যে কাজ করছে উচ্ছ্বাস।

কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের বিপরীতে হতাশা আংশিক কমিটিতে জায়গা না পাওয়া অবহেলিত নেতাদের মধ্যে। বিশেষত, যারা যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো পদের আশায় ছিলেন। তারা বলছেন, এই অবহেলায় অনেককে রাজনীতির মাঠ থেকেও বিদায় নিতে হতে পারে।

আংশিক কমিটি ঘোষণার পর হতাশ এমন কয়েকজন বিএনপি নেতা কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য, নব্বইয়ের দশকের অনেক ছাত্রনেতাসহ রাজপথের কিছু পরীক্ষিত নেতা এবার পদ পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু ইতোমধ্যে ঘোষিত আংশিক কমিটিতে জায়গা না হওয়ায় তারা আশা হারাচ্ছেন। তারা ভেবেছিলেন, বিএনপির এই দুর্দিনে দলের রাজপথের পরীক্ষিত নেতাদের কাছে টানবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাদের পদবি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে আবার আন্দোলনের ডাক দেবেন। কিন্তু অবহেলিতদের আরও দূরে ঠেলে দেওয়ায় তাদের অনেকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার চিন্তায়ও পড়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, রাজপথের নেতাদের সামনে আনা হচ্ছে না দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে। সাংগঠনিক পর্যায়ের সাবেক ছাত্রনেতারা এখন  হতাশায় ভুগছেন। বিএনপিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে এমনিতেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন অনেকে। আরও দূরে ঠেলে দেওয়ায় এবার একেবারে হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে।

নব্বইয়ের দশকের ছাত্রনেতা এএসএম মিজানুর রহমান মৃধা ডাবলু বলেন, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদের দলে জায়গা না দিলে তাতে শুধু নেতাদের নয়, দলেরও ক্ষতি হবে। মাঠের নেতারা এখনও অবহেলিত রয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ১৯৯০ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পেছনে ছাত্রনেতাদের অনেক অবদান ছিল। কিন্তু আজ তাদের অনেককেই দল থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুল আলম ফরহাদ বলেন, দলে কোনো পদ না থাকলে রাজনীতির মাঠে মূল্যায়ন থাকে না। অনেকটা হারিয়ে যেতে হয়। ৯৫ সালে ছাত্র রাজনীতি করার সময় হাত হারিয়েছি। ২০০৮ সালে মুক্তাগাছা থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম, পাইনি। এরপর থেকে অনেকটাই দলে অবহেলিত। তবুও আশা করছি আমাদের মূল্যায়ন হবে।

আরেক সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এখন ঢাকা ছেড়ে অবস্থান করছেন নিজ এলাকা নোয়াখালীতে। তিনি বলেন, বিএনপি কী করছে জানি না। তবে, আমরা হতাশ। যদিও এখনও হাল ছাড়িনি।

স‍াইফুল বলেন, বিএনপি মহাসচিবের (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আমরা দূরে থাকলে দলেরও ক্ষতি হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাবো।

সাবেক ছাত্রনেতা রমেশ দত্ত বলেন, বিএনপির জন্য কাজ করি। কিন্তু আমরা ভাল পদ পাই না। এখনও পাবো কিনা শঙ্কিত। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও নাদিম মোস্তফা আমার বন্ধু। একসঙ্গে রাজনীতি করছি আমরা। ছাত্রদল-যুবদলে একসঙ্গে ছিলাম। এখন সংখ্যলঘু নিয়ে কাজ করছি বিএনপির জন্য। বন্ধুরা বড় বড় পদ পেয়েছে। আমি পাবো কিনা জানি না।

রমেশ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ তাকে ভালো জানেন। তারপরও তিনি পদ পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন।

সাবেক এ ছাত্রনেতার দাবি, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানদের নিদের্শে তিনি কাজ করলেও তার বিপক্ষে দলের ভেতরে একটি শক্তিশালী গ্রুপ কাজ করছে। তবে এরপরও ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বাকি কমিটির আশায় আছেন বলে জানান রমেশ দত্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এমএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।