ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘আসুন সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৬
‘আসুন সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলি’ বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কালবিলম্ব না করে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
 
রোববার (০৩ জুলাই) বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।


 
এর আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। গুলশান হামলার প্রেক্ষিতে এ বৈঠক ডাকা হয়।
 
সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তিনি।
 
খালেদা জিয়া বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে তারা কেউ হয়তো থাকবো না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত আজ বিপন্ন।
 
তিনি বলেন, কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি। তাই কালবিলম্ব না করে আসুন, আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দল-মত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
 
কোনো অজুহাতেই শান্তিপ্রিয় নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা সুস্থতার লক্ষণ নয় মন্তব্য করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কূটনৈতিক এলাকার কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও বোমা নিয়ে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২০ জন নিরাপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই বিকারগ্রস্ততার প্রতি আমরা তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।
 
হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটি এবং সন্ত্রাসীদের সামর্থ্য প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এর আগে সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এখন তা আর চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ, আমাদের এই শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসের দানব গোপনে বেড়ে উঠছে। তারা এখন পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ভয়ংকর ছোবল হানছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
 
কোনো সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরাপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না।
 
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সন্ত্রাস মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায় সম্ভাব্য সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের এই বিপদের দিনে সহানুভূতি ও সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে যেসব বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সে দেশের সরকার ও জনগণের।
 
তিনি বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি, সেটা নিছক আইন-শৃঙ্খলা জনিত মামুলি কোনো সমস্যা নয়। কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবেলা করা যাবে না। এই সংকটের শিকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।
 
গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা এবং সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৬
এজেড/আরএইচএস/এসএইচ/এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।