ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।



খালেদা জিয়া বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সুন্দরবনের এতো কাছে পশুর নদীর তীরে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী।

তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে ঘোষণা করে। এ বনের বিরল প্রজাতির পশু-পাখি, বনের ভেতর ও পাশ দিয়ে বলে চলা নদী ও খালের মৎস্যসম্পদ এবং বিপুল বনজ সম্পদ বিনষ্ট হওয়ার যে আশঙ্কা বিজ্ঞানীরা করছেন, তার প্রমাণ অসংখ্য।

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, আমেরিকার টেক্সাসে ফায়েত্তি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে ৩০ হাজার টন সালফারডাই অক্সাইড নির্গত হতো। এর ফলে টেক্সাসের হাইওয়ে ২১’এর ৪৮ কিলোমিটার জুড়ে গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন হলে তাতে বিভিন্ন মাত্রার দূষণকারী উপাদান থাকে। সে কারণে পৃথিবীর সব দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে ‘শূন্য নির্গমন’ নীতি অবলম্বন করা হয়। কিন্তু রামপালে এ নীতি অনুসরণ না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন। অথচ এ কোম্পানিই যখন ভারতের ছত্তিশগড়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে চেয়েছিল তখন ‘শূণ্য নির্গমন’ নীতি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে সুপার ক্রিটিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করার পরেও ৭৯ লাখ টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। যতো উঁচু চিমনিই ব্যবহার করা হোক, বাতাসের চেয়ে ভারি এ গ্যাস এদেশেই এবং সুন্দরবনের ওপরেই ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার-ডাই অক্সাইড এবং ৮৫ টন নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইড নির্গত হয়ে সুন্দরবনের বাতাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে গোটা সুন্দরবন ও তার আশপাশের অঞ্চলকে ধ্বংস করবে। ১৯৯৭ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে সুন্দরবনের মতো পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকায় বাতাসে সালফার-ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হতে পারবে না।

সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করতে হবে। এ সময় জাহাজ থেকে কয়লার গুড়া, ভাঙা বা টুকরা কয়লা, তেল, ময়লা-আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিঃসৃত হয়ে নদী, খাল, মাটিসহ গোটা সুন্দরবন দূষিত করবে। কয়লা স্থানান্তরের যন্ত্রপাতি শব্দদূষণ ঘটাবে এবং রাতের বেলায় জাহাজের সার্চলাইটের আলো নিশাচর প্রাণীসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পশু-পাখির জীবনচক্রে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং এ হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হোন।

২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেম ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৬
এজেড/এএসআর

** ‘ভারত নিজের দেশে যা পারেনি, বাংলাদেশে তা করছে’
** ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশ ও গণবিরোধী’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।