ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

জামায়াত ছাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখছে না বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
জামায়াত ছাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখছে না বিএনপি

ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য’র প্রশ্নে জামায়াত-বিএনপির সম্পর্কের উপর আরেক দফা ঝড় বয়ে গেলেও আপাতত জামায়াত ছাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখছে না বিএনপি। সুতরাং দুই যুগের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই ‘বন্ধুর’ পথ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট রয়েছে রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি।


 
সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্য নিয়ে আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের জামায়াত ছাড়ার শর্ত, বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর খোলা চিঠি, জোট শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের হঠাৎ সংবাদ সম্মেলনে মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি চিন্তায় ফেলে দেয় বিএনপিকে।
 
বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ১৮ ও ২১ আগস্ট যথাক্রমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সেখানে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সম্পর্ক কী হবে- তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
 
আলোচনার এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন- জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট থাকছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের।
 
বিভিন্ন মহল ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের অনুরোধ, পরামর্শ ও উপদেশ উপেক্ষা করে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে গত এক সপ্তাহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
 
আলাপকালে বেশিরভাগ নেতা জানান, এই মুহূর্তে জামায়াত ছাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ তারা দেখছেন না। বরং ২০ দলীয় জোটের অখণ্ডতা বজায় রেখে সামনের দিনগুলোতে সরকারবিরোধী শক্ত অবস্থান গড়ে তোলা-ই বিএনপির বড় লক্ষ্য।
 
আর এই লক্ষ্য অর্জনে জামায়াতের জনসমর্থন, অর্থিক ও সাংগঠনিক শক্তি, আন্তর্জাতিক লবিং, আনুগত্য, রাজপথের আন্দোলনে পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।
 
সূত্রমতে, ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাব ও পরামর্শ ভেবে দেখার জন্য বিএনপির প্রগতিশীল অংশ দলটির হাইকমান্ডকে অনুরোধ করেন। জামায়াত ছাড়লে বিএনপির কী কী উপকার হবে- সে বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করেন।
 
কিন্তু বিএনপিতে থাকা কট্টরপন্থি কিছু নেতা খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হন- জামায়াত হচ্ছে তুরুপের তাস। ‘পরগাছা’ টাইপের এই দলটি বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে না-এমন গ্যারান্টি কারো কাছে নেই।
 
তাছাড়া যাদেরকে জোটে ভেড়ানোর জন্য জামায়াত ছাড়ার কথা বলা হচ্ছে, সেই আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আব্দুর রবের জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জে এস ডি), ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, ডা. একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সিপিবি ও খালেকুজ্জামানের বাসদ মিলেও জামায়াতের সমান ভোট কাস্ট করতে পারবে না।
 
এ দলগুলোর জনসমর্থন ও সাংগঠনিক শক্তি একখানে করলে জামায়াতের সমান হবে না। সর্বপরি দল পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন-তাও নেই ওইসব রাজনৈতিক দলের।
 
অধিকন্তু, জামায়াত ছাড়লেই আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, ড. কামাল হোসেন, ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজনীতি করতে আসবেন-এমন প্রতিশ্রুতিও মেলেনি তাদের কাছ থেকে।
 
বরং নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুলতান মো. মনসুর, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের খালেকুজ্জামান, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে আলাদা একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা দীর্ঘ দিন ধরেই করে যাচ্ছেন আ স ম আব্দুর রব।
 
গুলশানে জঙ্গি হামলার পর এই ঐক্য প্রচেষ্টার পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করেন তিনি। ওই সময় বাংলানিউজকে তিনি বলেছিলেন- জাতীয় ঐক্য’র ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো কথা বিএনপিকে দিইনি। বরং নিজেরাই আলাদা একটা জোট গঠনের চেষ্টা করছি।
 
বিএনপি নেতারা বলছেন- যারা জামায়াত ছাড়ার কথা বলছেন, তারা কেউ বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐক্য’র ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। অতীতে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো ঐক্যও হয়নি। সুতরাং তাদের ভরসায় দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে ত্যাগ করা ঠিক হবে না।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভক্তির রেখা টেনে জাতীয় ঐক্য হয় না। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট আন্দোলন ও নির্বাচনের। সেটা থেকে সরে আসার যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৬
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।