ঢাকা: টানা ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির আপাতত লক্ষ্য সংসদে যাওয়া। তাই যেভাবেই হোক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করবে দলটি।
ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা পেলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ আভাসই পাওয়া গেছে।
২০০৬ সালের অক্টোবরে ক্ষমতা হারানোর পর টানা দুই বছর সংসদের বাইরে থাকে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পায় তারা।
কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে ফের সংসদের বাইরে চলে যায় বিএনপি। এরপর প্রায় ৩ বছর কেটে গেলেও সরকারকে চাপে ফেলে মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায় করার মতো কিছু করতে পারেনি দলটি। বাকি দুই বছরে কিছু করতে পারবে বলেও মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এমন বাস্তবতায় বিএনপির বেশিরভাগ নেতা মনে করেন, ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে গেলে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভবনা একেবারই ক্ষীণ। তবে সন্তোষজনক আসন নিয়ে প্রধান বিরোধীদল হতে পারবে বিএনপি।
কিন্তু বিএনপির যেসব নেতা রাজনীতিকে অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য বানানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, তারা নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে চাপ দিচ্ছেন। কারণ, সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ঠিকই ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মিল, কল-কারাখানা, ব্যাংক-বিমা, পোশাক-শিল্প, শেয়ারবাজার, ঠিকাদারী সবই চলছে ঠিক-ঠাক মতো।
দলীয় সূত্রমতে, দলের ভেতরে থাকা এসব ‘কুচক্রীদের’ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির মূলধারার নেতারা। তারা খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন-রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপিকে আপাতত সংসদে যেতে হবে।
৭০/৮০ আসন নিয়ে বিরোধীদল হতে পারলেও রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ভূমিকা পালন করার সুযোগ থাকবে।
শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। কারণ নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দু’টি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির মূলধারার নেতারা কোনো অবস্থাতেই চান না, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের মতো নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যাক।
তাছাড়া নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলে বিএনপি আর রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হবে না। একটি সংগঠনে পরিণত হবে। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের এমন পরিণতি দেখতে চান না বিএনপির মূলধারার নেতারা।
তাই তারা সুবিধাবাদী-সুযোগসন্ধানী-পুঁজিপতি নেতাদের প্ররোচণা থেকে দলের হাইকমান্ডকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত হলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৩ শ’ আসনে নির্বাচন করবে বিএনপি। এক্ষেত্রে জোট শরিকদের জন্য ১০/১৫টি আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। লক্ষ্য থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে জিতে সরকার গঠন করা। আর তা যদি নাও হয় আপাতত সংসদে যাওয়া।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী একটা দল। জন্মলগ্ন থেকে এ দলটি জনগণের ম্যানডেড নিয়ে হয় সরকারে, না হয় বিরোধীদলে থেকে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
‘শুধু ক্ষমতার জন্য বিএনপির রাজনীতি নয়, গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই বিএনপির লক্ষ্য,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৬
এজেড/এমএ