ঢাকা: ‘অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে’- চরম দু:সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া দলটির সান্তনার জায়গা জুড়ে ছিল এই ‘বিশ্বাসটাই’!
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবিতে সেই বিশ্বাসে কিছুটা ফাটল ধরেছে। নির্বাচনের ফল বড় দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে।
দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যসহ অন্তত ৯জন নেতার সঙ্গে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) একান্ত আলাপচারিতায় এ আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা রুহুল কবির রিজভী মিডিয়ার সামনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের বরাত দিয়ে ‘সুক্ষ কারচুপির’ অভিযোগ তুলে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করলেও দলটির শীর্ষ নেতারা বিষয়টিকে সেভাবে নিচ্ছেন না।
তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সামনে বিএনপির প্রার্থী সব দিক দিয়েই ছিল ‘অসহায়’। জনপ্রিয়তা, বিচক্ষণতা, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘দাপট’ দেখানোর ক্ষমতা-সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
যার ফলে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরও ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের। আর এ বিষয়টি-ই ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে।
সূত্রমতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ব্যাপক সহিংসতা ও গোলযোগপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে বিএনপি কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।
কিন্তু ওই সময়-ই নানা মহল থেকে বিএনপির সক্ষমতা নিয়ে কথা উঠেছিল। বলা হচ্ছিল, নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রতিপক্ষের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি এবং স্থানীয় ও পুলিশ প্রশাসনকে যথাযথ দায়িত্বপালনে বাধ্য করার মতো সক্রিয়তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।
তবে এসব বিশ্লেষণকে আমলে না নিয়ে বিএনপি বরাবর-ই বলে গেছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। ফলশ্রুতিতে হেরেছে বিএনপি। ভালো একটা নির্বাচন হলেই ফল উল্টে যাবে।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) নাসিক নির্বাচনের পর এ কথা আর জোর দিয়ে বলতে পারছে না বিএনপি। বরং আত্মমূল্যায়ন ও আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন দলটির বেশিরভাগ নেতা। কর্মীদের মধ্যেও চলছে নানা রকম বিশ্লেষণ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) নাসিক নির্বাচনের ফল কোনো দিকে যাচ্ছে তা যখন নিশ্চিত, তখন রাত সোয়া ৯টার দিকে গুলশান অফিসে আসেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদিন গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া আর কেউ যাননি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি যাননি।
দলীয় সূত্রের মতে, এমন ভরাডুবির পর চেয়ারপারসনের সামনে গিয়ে অপ্রস্তুত হতে চাননি বিএনপির কোনো নেতা। ফলে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের কোনো কথা হয়নি।
ঘরোয়া পরিবেশ ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসা নেতারা নাসিক নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে নানা রকম মূল্যায়নে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে, তাদের মূল্যায়ন অন্যবারের মতো ‘গড়চাপা’ সরকারের উপর দোষারোপে সীমাবদ্ধ থাকছে না।
এদিকে ধানের শীষের প্রার্থীর বরাত দিয়ে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবির পর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার কাছে এর যৌক্তিকতা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আর কী বলার আছে?’
তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের ভোটের ব্যবধানকে বিএনপির কোনো কোনো নেতা অস্বাভাবিক মনে করছেন। তারা বলছেন, জয়-পরাজয়ের ব্যবধান আরেকটু কম হলে এ নিয়ে কথা বলার কিছু থাকতো না। বড় ব্যবধানের কারণেই পর্দার অন্তরালে প্রশাসিনক ভূমিকা নিয়ে কথা উঠছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান এক রকম প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এখানে প্রশাসন কতটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে-সেটিই এখন বড় কথা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এজেড/এসএইচ