বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিচ অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি’ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক সাজ্জাদুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
মেজর হাফিজ বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। একাত্তরে তারা আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে, সেজন্য জাতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে কেয়ামত পর্যন্ত এ-ঋণ শোধ করতে হবে; এটা তো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে নিজস্ব স্বার্বভৌমত্ব, নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য। তাহলে পাকিস্তান কী দোষ করেছিল। পাকিস্তানকে তাড়িয়ে দিয়ে কি এখন দিল্লির দাসত্ব করব?
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সিদ্ধান্ত হয়েছিলো প্রতি বছর চারটি মিটিং হবে। কিন্তু এখন ১০ বছরেও একটি মিটিংও হয় না। অর্থাৎ এই কমিশন ব্যর্থ পানি সমস্যার সমাধান করতে।
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওযা পর্যন্ত বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা পাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যেতে পারে। আর এজন্য তারা বলে তিস্তার পানি পেলাম কি পেলাম তাতে কিছু যায় আসে না। এরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তারা দায়বদ্ধ অন্য দেশের কাছে।
পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে হলে পানি বণ্টন সমস্যাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে উল্লেখ করে সাবেক এই পানি সম্পদ মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে যখন তারা (ভারত) গঙ্গা নদীর সব পানি আটকে রেখেছিলো বাধ্য হয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতিসংঘে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে একটি সমাধানও আমরা পেয়েছিলাম।
আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ভারতের উপর চাপ প্রয়োগের ফলে ১৯৭৭ সালে একটি সফল পানি চুক্তি হয়েছিলো গঙ্গা নদীর উপরে। সেখানে আমরা ৬০ ভাগ পানি পেতাম, ভারত পেত ৪০ ভাগ। চুক্তিতে একটা গ্যারান্টি ক্রোজ ছিলো। তোমরা (ভারত) পানি পাও না পাও বাংলাদেশকে ৬০ ভাগ পানি দিতেই হবে-বলেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ জোর দিয়ে কিছু বলতে পারে না। সরকারেরও আন্তর্জাতিক কোনো বন্ধু নেই যে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারবে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য। সেই জন্য বাংলাদেশের মানুষ এখন অসহায় অবস্থায় রয়েছে।
গঙ্গাব্যারেজ নির্মাণে চীনের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য গঙ্গাব্যারেজ নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার বহুদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পে চীন অর্থ সাহায্য করতে চেয়েছে। সেই সাহায্য বাংলাদেশের গ্রহণ করা উচিত। ভারতের অর্থ সাহায্যে গঙ্গাব্যারেজ তৈরি করলে ভারত লাভবান হবে। বাংলাদেশ সুবিধা পাবে না।
অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে ভারত বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারার ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়। সেখানে ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রী প্রিয় রঞ্জন দাস মুন্সি সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশ পক্ষের আমি প্রতিনিধিত্ব করি।
ওই বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আমরা মৌখিকভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম। তিস্তার নদীর গজলডোবায় যে পানির প্রবাহ আছে তা ৪০ ভাগ পাবে ভারত, ৪০ ভাগ বাংলাদেশ আর ২০ ভাগ পানি নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংরক্ষিত থাকবে-বলেন মেজর (অব.) হাফিজ।
তিনি বলেন, কিন্তু বৈঠকের এক সপ্তার মধ্যে প্রিয় রঞ্জন দাসের দপ্তর পরিবর্তন হয়। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ে চলে যান। এই ফাইল ধামা-চাপা পড়ে গেল। এর গত ১২ বছরে যৌথ নদী কমিশনের কোনো মিটিং হয়েছে কি না আমরা জানি না।
ভারতকে পানি আগ্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে হাফিজ বলেন, মহাকালী নদীর পানি বণ্টনের জন্য নেপালের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। কিন্তু ভারত চালাকি করে এমন জায়গায় বাধ তৈরি করেছে সারা বছর নেপালে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। প্রতিবাদে নেপালের জনগণ ভারতের সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা তাও পারছি না।
সামরিক চুক্তির আগে গণভোট নিন
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৭
এজেড/জেডএ