একে তো ক্ষমতার বাইরে আছে বছর দশেকেরও বেশী সময় ধরে। তারওপর দেশিয় রাজনীতি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনীতি সবখানেই বল্গাহীন সাফল্য ক্ষমতাসীনদের।
শূন্য পকেট হাতড়াতে থাকা বিএনপি তাই কি করবে তা বুঝে উঠতে না পেরে হয়ে পড়েছে দিকভ্রান্ত। কি বলবে তা বুঝে উঠতে না পেরে শুরু করেছে আবোলতাবোল বকা।
এই তো কিছু দিন আগেও যে দল তেলের হাঁড়ি নিয়ে দিল্লি দৌড়াতে ব্যস্ত ছিলো, সেই দলই এখন নিজেদের অবস্থান ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে লাগামহীন গীবত গাইতে শুরু করেছে।
অথচ বছর দুই আগে ২০১৫ সালের জুনে ভারতের নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য খালেদা জিয়ার চেষ্টা ও তদবির ছিলো চোখে পড়ার মতো।
সংসদে না থাকায় তখন খালেদা জিয়ার চেয়ে মোদির কাছে বেশী গুরুত্ব পাচ্ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। অনেক বলে কয়ে যদিও মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তখন মিনিট দশেক সময় পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া, কিন্তু ঝেড়ে কাশতে শুরু করার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়েছিলো মোদির পাল্টা প্রশ্ন।
ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে তখন লেখা হয়েছিলো-‘মোদী ফিরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে বাংলাদেশের সর্বত্র আলাপ-আলোচনায় এখন এটাই প্রধান মুখরোচক বিষয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন- মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন খালেদা জিয়া, এবং এর জন্য তার একগুঁয়ে মনোভাবই দায়ী।
গত সাধারণ নির্বাচনে দলকে অংশগ্রহণ করতে না-দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বিএনপি। সংসদে কোনও প্রতিনিধি না-থাকায় সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বিএনপি ও দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার কূটনৈতিক গুরুত্ব তলানিতে ঠেকেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সেই অসহায় অবস্থাটিই হাটে হাঁড়ি ভাঙা হয়ে গিয়েছে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে। ’
এর পর আরো বছর দুই পার হলেও আর জোড়া লাগেনি বিএনপির সেই ভাঙ্গা হাঁড়ি। বরং ভাঙ্গা টুকরায় এখন বুনো শ্যাওলা আর পোকা-মাকড়ের বসত। তাই দলীয় প্রধানের সঙ্গে নেতাদের বক্তব্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে ফুটছে দলটিতে।
তাদের ভাবনায়, ভারত সফরে গিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রটাকে নাকি মোদির হাতেই তুলে দিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে তিনি অকার্যকর করে ফেলবেন বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকে। চুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর আগেই তারা বুঝে নিয়েছেন, তিস্তার পানি ভারতেই দিয়ে আসতে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির এসব বক্তব্যের সমালোচনা হচ্ছে ভারতেও। দেশটির বিভিন্ন পত্রিকায় বিএনপির বিরোধিতার প্রসঙ্গ অল্প করে হলেও তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিদিনই। একই সঙ্গে এ বিরোধিতা যে হাসিনা-মোদি বোঝাপড়ায় বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে না সেটা বলতেও কোনো দ্বিধা দেখা যাচ্ছে না কারো মধ্যে।
অসংগঠিত ও অগোছালো হয়ে পড়া বিএনপি তাই দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে শেখ হাসিনার সফল ভারত সফরের কারণে। সেই যে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্নটা তারা দেখে আসছে, তাতেও তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অস্পষ্টতা।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দিশাই এসেও খুব একটা আলো দেখাতে পারেননি বিএনপিকে। বরং বিদেশি বন্ধুরা চাপ বাড়িয়েছে নির্বাচনে যাওয়ার।
সাম্প্রতিক খবর হলো- শেখ হাসিনাকে ভারতে নজিরবিহীন সম্মান প্রদর্শ আরো বেশী এলোমেলো করে দিয়েছে বিএনপির রাজনৈতিক আচরণ। প্রটোকল ভেঙ্গে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে নিজেই হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি। কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সবারই যেনো প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ভবনের হেঁসেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য চলছে রান্নার উৎসব।
দিকভ্রান্ত বিএনপির জন্য এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিনই বটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৭
জেডএম/