এর বাইরে আরেকটি শ্রেণী আছেন। তারা হলেন রাজনীতিবিদ।
গত ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাদের ঈদ আসছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যঞ্জনায়। এই ১১ বছরে প্রতি ঈদের আগেই হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ এসেছে ঈদের পর আন্দোলনের পস্তুতি গ্রহণের। কিন্তু এবারের নির্দেশ একটু ভিন্ন রকম।
মুখে নানা কথা বললেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সে কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে অবস্থানরত নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গুলশান কার্যালয়ে দেখা করতে আসা নেতাদের বলেছেন- আপনারা যার যার এলাকায় চলে যান। দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, জনগণের পাশে দাঁড়ান। সুযোগ পেলে গণসংযোগ করুন।
গত বছরের মতো এবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে, এরপর বিশিষ্ট নাগরিক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। পরে বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন।
গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে লন্ডনে ঈদ উদযাপন করছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বড় মেয়ে মির্জা শামারু, মেয়ে জামাই এবং নাতনির সঙ্গে ঈদ করবেন। এরইমধ্যে তিনি সস্ত্রীক পৌঁছে গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী বিএনপির সিনিয়র, মাঝারি সারি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছেন। গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, চিনি-সেমাই বিতরণের ছবি পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোরে, ড. মঈন খান নরসিংদী ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বর্ষিয়ান নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। ঈদের নামাজ শেষে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করে বাসায় অবস্থান করবেন তিনি। কুশল বিনিময় করবেন সহকর্মী ও অনুসারীদের সঙ্গে। পরের দিন যাবেন পৈতৃকভিটা মুন্সিগঞ্জে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঢাকায় ঈদ করে পরের দিন নোয়াখালীতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। গুলশানে বাড়ি নিয়ে ঝামেলায় থাকা মওদুদ বরাবরই ঢাকায় ঈদ করে নিজের নির্বাচনী এলাকায় যান। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, মাহবুবুর রহমান শামীম, কাদের গনি চৌধুরী। নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ করবেন দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা শওকত মাহমুদ কুমিল্লায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে, হারুনুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জে, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদীতে, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনায়, শফিউল বারী বাবু লক্ষ্মীপুরে, তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোরের লালপুরে, আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জে, মাহবুবুল হাসান ভূইয়া ফরিদপুরে, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করবেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে হাসান মামুন, অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার, আনোয়ার হোসেন উজ্জল রাজশাহীতে, ফরহাদ হোসেন আজাদ, আবদুল মতিন, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, শাম্মী আক্তার, এম আমিনুল ইসলাম,আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফরী, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু,শহীদুল্লাহ ইমরান ও বিল্লাল হোসেন তারেকও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।
অর্থাৎ বিএনপি যে অংশটি আগামীতে দলের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে, সে অংশের নেতারা খালেদা জিয়ার নির্দেশে এরইমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে গেছেন।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান ঈদ করবেন ঢাকায়।
কারাগারে ঈদ
মামলায় জড়িয়ে প্রতিবছরই বিএনপির নেতাদের কারাগারে ঈদ করতে হয়। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার কারাগারে ঈদ করা বিএনপির নেতার সংখ্যা কিছুটা কম।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বেশ কয়েক বছর ধরেই কারাগারে ঈদ করছেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীসহ তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এবার কারাগারে ঈদ করবেন।
** জোট নেতাদের ভোট প্রস্তুতি, ঈদ ইফতার হাতিয়ার
বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এজেড/এইচএ/