বয়স, অসুস্থতা, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন এবং নির্বাচিত হওয়ার পর পরবর্তী পাঁচ বছর জনগণের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন-এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে স্থায়ী কমিটির প্রায় হাফ ডজন প্রবীণ সদস্য সন্তানদের জন্য ছেড়ে দিতে চান নিজের নির্বাচনী আসন।
এ তালিকায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য এম শামসুল ইসলাম রয়েছেন।
এসব প্রবীণ নেতাদের কেউ কেউ এরইমধ্যে আগামী নির্বাচনে নিজের আসনে ছেলের মনোনয়নের ব্যাপারে হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন। কারও কারও ব্যাপারে হাইকমান্ডেরই রয়েছে নিজের জায়গা যোগ্য উত্তরাধিকারকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ। কেউ কেউ আবার যোগ্য উত্তরাধিকার তৈরি করতে না পারায় রয়েছেন শঙ্কার মধ্যে।
দলীয় পরিমণ্ডলে আলোচনা চলছে, স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য সাবেক চার বারের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বড় ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনকে নিজের আসনের জন্য যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে তৈরি করেছেন। আগামী নির্বাচনে কুমিল্লার দাউদকান্দি আসনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জায়াগায় ড. খন্দকার মারুফ হোসেনকে দেখা যেতে পারে।
যোগ্য উত্তরাধিকার তৈরিতে সব চেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ এম তরিকুল ইসলাম। লিজেন্ড এ রাজনীতিবিদের ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতির মাঠে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন।
বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিলে সহ-সাংগঠনিক পদ পাওয়া অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বাবা এম তরিকুল ইসলামের নির্বাচনী আসন যশোর-৩ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন। তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় এবং যোগ্য উত্তরাধিকার তৈরি হয়ে যাওয়ায় এ আসনে অমিতকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।
অবশ্য বাংলানিউজকে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, মনোনয়নের জন্য দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে- সেটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু বাবা যত দিন আছেন, তত দিন পর্যন্ত তার আসনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তা ঘুণাক্ষরেও করি না। সে শিক্ষা বাবা আমাদের দেননি। আমি চাই বাবা সুস্থ থাকুন, তিনিই নির্বাচন করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের আসনে ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরকে নির্বাচন করাতে চান।
বিএনপির সবচেয়ে প্রবীণ এ নেতা এরইমধ্যে ছেলেকে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে জায়গা করে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসন ছেলের জন্য ছেড়ে দিতে চান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে। এখন তরুণদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। দল যদি আমার ছেলেকে যোগ্য মনে করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে আমার আসনে সে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য, মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সাবেক চার বারের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলাম এখন বার্ধক্যজনিত কারণে চলাচল করতে পারেন না। স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ।
আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বাইরে থাকবেন বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ। তার জায়গায় বড় ছেলে ব্যবসায়ী এফবিসিসিআই নেতা সাইফুল ইসলাম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও এমকে আনোয়ার যোগ্য উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেননি। সামরিক কর্মকর্তা ও সরকারি আমলা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা এই দুই নেতার সন্তানরা রাজনীতির জন্য তৈরি হতে পারেননি। বয়স হলেও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ারও নেই যোগ্য উত্তরাধিকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৭
এজেড/এইচএ/