দশম সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখে ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া এই দলটি মনে করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ আর কিছুতেই ফিরবে না। কিন্তু নির্বাচনকালে শেখ হাসিনার ক্ষমতা কোনোভাবে খর্ব করা গেলে তার প্রভাব পড়বে মাঠ প্রশাসনে।
এজন্য ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তাব দেবে তারা। তবে এই প্রস্তাবকে বিএনপি এখনই মুখ্য বিকল্প হিসেবে সামনে আনবে না। মূলত তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে তারা। তারপর সংলাপ এর সুযোগ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে দেবে ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তাব।
যদিও এমন প্রস্তাবের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসছে প্রধানমন্ত্রীর ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে সংবিধানে কিছু উল্লেখ না থাকার বিষয়টি।
তবে ইচ্ছা করলেই প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে যেতে পারেন বলেও মনে করছে তারা। এক্ষেত্রে তারা সামনে আনছে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ছুটির উদাহরণ। সেবার একটানা অনেক দিন কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পাশে ছিলেন শেখ হাসিনা। মায়ের সাহচর্যে থেকে ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের প্রথম সন্তানের মা হন পুতুল।
নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে তাই প্রধানন্ত্রীর ছুটির বিষয়টি আনতেই চাইছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। যদিও এ নিয়ে নাকি খোদ দলের ভেতরই এখনো দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ শীর্ষনেতা এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুললেও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ এখনো বিষয়টি এড়িয়ে চলেছেন। এমন প্রস্তাবের বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন দলেরই কেউ কেউ।
আবার দলেরই কোনো কোনো সূত্র বলছে, কোনো কিছুই ফাইনাল নয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে দিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের যে দাবি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট শিবিরে উঠেছে, তারই কোনো অংশে প্রধানমন্ত্রীর ছুটির বিষয়টি জুড়ে দিয়ে দরকষাকষির ক্ষেত্র তৈরি করতে চায় বিএনপি ও তার মিত্ররা।
সূত্র বলছে, বিএনপি হাই কমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই বিএনপি পন্থি বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ এরইমধ্যে বিছিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে প্রধানমন্ত্রীর ছুটির বিষয়টি সামনে এনেছেন। এর মাধ্যমে মূলত সরকার আর জনগণের প্রতিক্রিয়া পরখ করতে চাইছেন তারা। কেননা, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে কি কি থাকবে তা জানানোর সময় এখনো আসেইনি।
তবে তারা এও বিশ্বাস করেন, সংবিধানে থাক বা না থাক, ছুটি নেওয়াটা সম্পূর্ণই নির্ভর করতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরে। কারণ, সংবিধানে কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রীর ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়নি। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন ছুটিই বিএনপিসহ সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিতে পারে বলে মনে করছে তারা।
বিএনপি এও মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে গিয়ে কোনো মন্ত্রীকে তার দায়িত্ব দিয়ে গেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর ছুটি প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এর বক্তব্য, এমন বিষয় সাধারণত সংবিধানে উল্লেখ থাকে না। তবে প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে ছুটি নিতে পারেন। এক্ষেত্রে অন্যান্য চাকরির মতো প্রধানমন্ত্রীর চাকরির ক্ষেত্রেও কোনো শর্ত নেই।
তবে দলীয় প্রধান হিসেবে ভোটের সময়ে ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে থাকার ব্যাপারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মত হওয়া প্রায় অসম্ভব এক বাস্তবতা বলেও আলোচনা চালু আছে বিএনপিরই দলীয় পরিমণ্ডলে।
দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি’র নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে, দলীয় সভাপতির পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার অথবা বিশিষ্ট কোনো নাগরিকের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ইত্যাদি প্রস্তাব থাকছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
জেডএম/