ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

বিএনপি

সেই জামায়াত ‘সক্রিয়’ থাকবে খালেদার মুক্তি আন্দোলনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
সেই জামায়াত ‘সক্রিয়’ থাকবে খালেদার মুক্তি আন্দোলনে জামায়াতের তাণ্ডব (ফাইল ফটো

ঢাকা: বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং বিভিন্ন সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলনে যে জ্বালাও-পোড়াও-অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা হয়েছে, তার জন্য বরাবরই অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতাবিরোধী দলটির এই সহিংসতার কারণে পরে তাদের কর্মকাণ্ডের দায় না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয় বিএনপি। এমনকি জোটের কর্মসূচিতেও জামায়াতকে এড়িয়ে যেতে দেখা যায়।

সহিংসতায় অভিযুক্ত সেই জামায়াতের নেতারা এখন বলছেন, তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনসহ ২০ দলীয় জোট ঘোষিত সব কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। যদিও যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতাদের ফাঁসির সময় বিএনপির নীরবতায় জোটের সম্পর্কে টানাপোড়েনের অনেক খবর ছড়িয়েছিল।

এরপর কর্মসূচিগুলোতে জামায়াতকে এড়িয়ে যাওয়া সেই টানাপোড়েনের খবরকে করেছিল আরও চাঙ্গা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, ২০ দলীয় জোট গঠনের পর থেকে সব কর্মসূচিতে জামায়াত সক্রিয় ছিল। ভবিষ্যতেও জোটের সব আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।

ওই নেতার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, জোটের আন্দোলনে থাকার অংশ হিসেবেই বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে মাঠে থাকছে তাদের দল। খালেদা জিয়াকে ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানোর পর গত এক সপ্তাহে বিএনপির সব কর্মসূচিতে গোপনে অংশ নেন যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বে চলতে থাকা দলটির নেতারা।

আবার বিএনপির কর্মসূচিতেও জামায়াতি স্টাইল লক্ষ্য করা যায়। সচরাচর মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর মিছিল করার মতো কোনো কর্মসূচি বিএনপিকে পালন করতে দেখা না গেলেও ৯ ফেব্রুয়ারি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জুমার পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করে দলটি।

একটি সূত্র জানায়, ওইদিনের মিছিলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের নেতারাও অংশ নেন। আর যারা মিছিলে অংশ নেন তাদের সবাই জুমার নামাজ পড়েই বের হয়েছিলেন। ২০১০ সালের আগে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে এ ধরনের মিছিল করতে দেখা যেতো জামায়াতকে।
    
পরের দিন ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল বিএনপির ঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি। সেদিনও জামায়াতি স্টাইলে ঝটিকা মিছিল করে একাধিকবার সরকার চালানো বিএনপি। সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে গোপনে নেতাকর্মীদের একটি স্পট জড়ো হতে বলে দেওয়া হয়। নেতাকর্মীরা ওই স্পটে বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাফেরা করেন। হঠাৎ স্লোগান শুনে সবাই জড়ো হয়ে যান। এরপর পুলিশ আসার আগেই লাপাত্তা।  

সেদিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর পাশে আজাদ প্রোডাক্টসের গলি থেকে এমন মিছিল বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। মিছিলটি দৈনিক বাংলা হয়ে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের কাছে গিয়ে শেষ হয়ে যায়।

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া ফরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার পর বিকেলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সরকারি প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালতকে ব্যবহার করে যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে, এ রায় তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। এ রায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ’

এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে অংশ নেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম। ওই দিন বৈঠক শেষে ২০ দলের সমন্বয়ক বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য অটুট রেখে পরিসর বাড়ানোর বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। তার কথায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েনের অবসানের ইঙ্গিতও উঠে আসে।

এ বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান আহমেদ মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত ও বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ এক নয়। তারা তাদের রাজনীতি করে, আমরা আমাদের রাজনীতি করি। তবে ২০ দলীয় জোট গঠনের পর থেকে আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে একসঙ্গে আন্দোলন করে আসছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে কোনো আন্দোলনে আমরা সক্রিয় থাকবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।