ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা বলছেন, বিএনপি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা নির্দলীয় সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে কোনো আন্দোলন করতে পারবে না। যা খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার পর আরও স্পষ্ট হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার জামিন হলে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হবে। কিন্তু এ দাবিতে বিএনপি মাঠে নামলে আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়ার জামিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সেটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনেও রূপ নিতে পারে।
আর এসব দাবিতে বিএনপি যে কোনো প্রক্রিয়ায় মাঠে নামতে পারলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে। এ কারণে আন্দোলন বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির যে কোনো প্রচেষ্টা ঠেকাতে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে আগামীতে বিএনপির যে কোনো কর্মসূচি কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পাশাপাশি বড় ধরনের কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেবে না সরকার।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। বিএনপির রাজনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে সরকার বা আওয়ামী লীগের যে ধারনা ছিল তারও পরিবর্তন হয়েছে খালেদা জিয়া রায়ের পর।
কোনো ধরনের ‘হার্ড লাইনে’ না যাওয়াকে বিএনপির দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার দল তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। তার সাজা হওয়ার পর তেমন রাজনৈতিক শক্তি বা তৎপরতা বিএনপি দেখাতে পারেনি।
‘ভবিষ্যতেও দলটিকে এভাবে কোনঠাসা করে রাখতে পারলে খালেদার মুক্তি বা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি নিয়ে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে না বিএনপি। ’
তবে একটা আশঙ্কাও করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, খালেদার মুক্তিসহ নির্বাচনকে ইস্যু করে বিএনপি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করতে পারে। যদিও প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে। গত নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি ও তাদের শরিকরা বড় ধরনের নাশকতা সরকার মোকাবেলা করেছে।
সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলেই মনে করেন আওয়ামী লীগের ওই নেতারা।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গেছেন। এতে তো সরকারের হাত নেই।
‘রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে আদালতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে। এর জন্য আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হবে। এরই মধ্যে যারা খালেদার মুক্তির নাম করে কর্মসূচি দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা হওয়া উচিত। ’
তিনি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে আন্দোলন করে মুক্ত করা যাবে না। খালেদা জিয়াকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রাম করে কিছু হবে না।
একই কথা জানালেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দণ্ডিত আসামিকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির প্রশ্নই আসে না। আইনি লড়াই করেই মুক্ত করতে হবে। আন্দোলনে বিএনপি জনসমর্থনও পাবে না।
‘বিএনপির জনসমর্থন গত ৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। আর কোনো কর্মসূচি দিতে চাইলে অনুমতির বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখবে,’ যোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৮
এসকে/এমএ