ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

যেসব যুক্তিতে আপিল করেছেন খালেদা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
যেসব যুক্তিতে আপিল করেছেন খালেদা কারাগার ও খালেদা জিয়া

ঢাকা: দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ৪৪টির মতো যুক্তি দেখিয়েছেন।

এর মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজের নামে কোনো একাউন্ট খোলেন নাই। নিজে হিসাব পরিচালনা করবেন বা হালনাগাদ করবেন এ জাতীয় কোনো তথ্য নাই।

খালেদা জিয়া স্বাক্ষরিত কোন ফাইল বা চেক পাওয়া যায়নি।

৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যকে রায়ে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে তিনি যা বলেছিলেন তা হলো- “অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নির্বিচারে গুলি করে প্রতিবাদী মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এগুলো কি ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি? শেয়ার বাজার লুট করে লক্ষ কোটি টাকা তছরুফ হয়ে গেল, নিঃস্ব হল নিম্ন আয়ের মানুষ, ব্যাংকগুলো লুটপাট করে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। ”

যুক্তিতে বলা হয়, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি’ বাক্যাংশের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছিল। কিন্ত তা সরাসরি খালেদা জিয়ার বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করে বিচারিক মননের প্রয়োগ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন আদালত।

আরেক যুক্তিতে বলা হয়েছে, এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাকে মামলার অভিযোগপত্রে সম্পৃক্ত করেছেন। এটা তিনি করেছেন ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ হয়ে।

আপিল আবেদনে আরও বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন। তাকে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির শিকারে পরিণত করার উদ্যোগ হিসেবে ২০০৮ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নেয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ বরাদ্দ বা এর কোনো লেনদেনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাত হয়নি, বরং ব্যাংকে তা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে বলেও যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়।

ট্রাস্টের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড বা লেনদেনে যদি অনিয়ম থাকত তাহলে তা প্রতিকারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। কিন্তু সে আইনে মামলা না করে করা হয়েছে দুর্নীতি দমন আইনে। কোনোভাবেই এ বিষয়টি দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে না।

৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ঢাকার বিশেষ জজ ৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় দেন। একইসঙ্গে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

রায় ঘোষণার ১১দিন পর সোমবার ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফাইড কপি বা অনুলিপি হাতে পান। রায়ের কপি নিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজলও।

এদিকে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরিমাণের দিক থেকে তা বর্তমান বাজার মূল্যে অধিক না হলেও তর্কিত ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিলো। আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া ওই সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। আসামি কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী সরকারি কর্মচারী হয়েও আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলের ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করেন।

পরবর্তীতে ওই হিসাব থেকে দু’টি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে প্রদান করায় খালেদা জিয়া ও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী অপরাধ করতে সহায়তার সামিল।

সাজা ঘোষণার পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।