বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিএনপি আয়োজিত জনসভায় সেই আশাবাদের কথাই ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য অনেক দূর এগিয়েছি।
বিএনপি নেতাদের এ আশাবাদে যেন আরেকটু আলো দেখান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সেদিনই রাতে দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেই মুক্তি পাবেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, কুমিল্লার দু’টি মামলায় জামিন হলেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মুক্তি পাবেন।
এটা কতোদিনের মধ্যে হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা সঠিক বলতে পারবো না। ওই দু’টি মামলার একটির শুনানির তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ও অপরটির ৫ সেপ্টেম্বর। একটিতে জামিন না হলে সরাসরি হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হবে, অপরটি জজ কোর্ট হয়ে হাইকোর্টে আসবে।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, একটি মামলায় হাইকোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও কুমিল্লার আদালত তা করেননি বলেই সময় বেশি লাগছে।
দলের অন্য নেতারা বলছেন, সরকার যদি ‘হস্তক্ষেপ’ না করে তাহলে এ মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যেই খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরবেন নেতাকর্মীদের মাঝে।
কারাগারে যাওয়ার পর মানহানির অভিযোগে ঢাকায় দু’টি, নড়াইলে একটি, কুমিল্লায় তিনটি মিলিয়ে মোট ছয়টি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। ভুয়া জন্মদিন উদযাপন ও রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগের এসব মামলায় খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে জামিন পেতে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ প্রক্রিয়ায় কুমিল্লার দু’টি ছাড়া বাকি চারটি মামলায় জামিন মঞ্জুর হয় খালেদার।
এর পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। আর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তিতে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বাংলানিউজকে বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়েছিল সেই মামলায় গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। আইন অনুযায়ী সেদিনই তার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সেই ১২ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত বর্তমান ‘অবৈধ সরকার’ খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। যে দু’টি মামলায় তিনি এখনো জামিন পাননি সে মামলাগুলোতে তিনি কারাগারে যাননি। ১২ মার্চ জামিন পাওয়ার পর খালেদা জিয়া যদি বাইরে আসতে পারতেন তাহলে তিনি সংশ্লিষ্ট আদালতে গিয়ে জামিন নিতে পারতেন। তখন যদি জামিন না পেতেন তাহলে পুনরায় তিনি কারাগারে যেতে পারতেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান অবৈধ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই খালেদা জিয়ার কারাজীবন বিলম্বিত করছে। আইন যদি নিজস্ব গতিতে চলে, তাহলে অচিরেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, খালেদাকে ছাড়া তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে বাকি দুই মামলায় জামিন পাওয়ার পর খালেদা মুক্ত হলে দলটি সরকার গঠনের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবে বলেও জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএইচ/এসএইচ/এইচএ/