এদিকে গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পরই শুরু হয় আসন ভাগাভাগি, যা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। যেহেতু দু’টি জোটেরই বড় দল বিএনপি সেহেতু আসন ভাগাভাগিতে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল তাদের ওপর। একদিকে নিজ দলের শত শত প্রার্থীর চাপ অন্যদিকে ২৬টি দলের আবদার রক্ষা নিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় বিএনপি নেতাদের। এরইমধ্যে আসন ভাগাভাগি শেষ করেছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত ৬ বছর ধরে জোটে থাকা সব দলের ভাগ্যে আসন মেলেনি।
জোটে থাকা (বিএনপি বাদে) ২২টি দলের মধ্যে ১০টি দল আসন পেলেও বঞ্চিত হয়েছে ১২টি দল।
বঞ্চিত সেই দলগুলো হলো-দেশের সবচেয়ে পুরনো দল মুসলিম লীগ, যার নেতৃত্বে আছেন এএইচএম কামরুজ্জামান খান। আসন পাননি এক সময়ের তুখোর নেতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। সম্প্রতি এই দলের সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও পরে তার স্ত্রী রেহানা প্রধানের মৃত্যুর পর দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান। পঞ্চগড়-২ আসনটি তাসমিয়া প্রধানকে দেওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত মনোনয়নে তার নাম নেই।
আসন পায়নি ইসলামী ঐক্যজোট। চারদলীয় জোট যখন গঠিত হয় তখন প্রয়াত আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বের পরে ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী। পরে নেজামী ও তার সঙ্গীরা ২০ দলীয় জোট ছেড়ে চলে যান। ভগ্নাংশ নিয়ে নেতৃত্বে আসেন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব। তিনি মনোনয়ন চাইলেও পাননি।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবার জোটের কাছে কোনো আসন পায়নি। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার গোলাম মোর্তুজা। কিছুদিন আগে তারা ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যোগ দেন যুক্তফ্রন্টে। কিন্তু ভগ্নাংশ থেকে যায় ২০ দলের সঙ্গে। যারা থেকে যান তারাও এবার কোনো আসন পাননি।
আসন বঞ্চিত অপর দল ইসলামীক পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন। তার মৃত্যুর পরে অন্যরা এই দলের নেতৃত্বে আছেন। বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, সাম্যবাদী দল, ইসলামীক পার্টি, জাতীয় দল ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।
২০ দলীয় শরিকদের মধ্যে যেসব দল আসন পেয়েছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২২টি, এলডিপি ৫, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ৪, জাতীয় পার্টি (জাফর) ২, খেলাফত মজলিস ২, বিজেপি ১, এনপিপি ১, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১, লেবার পার্টি ১, পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ ১। এর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি আসন দেওয়া হয়। এর মধ্যে গণফোরাম ৭, জেএসডি ৪, নাগরিক ঐক্য ৪ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে চারটি আসন দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আছি। তবে আমাদের দলের নিবন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য আমাকে নির্বাচন করতেই হবে। সেজন্য পঞ্চগড়-২ আসনে উন্মুক্ত হিসেবে আমি হুক্কা মার্কায় নির্বাচন করবো।
তিনি বলেন, পঞ্চগড়-২ আসনটি আমাকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিএনপি মহাসচিব আমাকে জানিয়েছেন তার পক্ষে আসনটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি বাংলানিউজকে বলেন, ৮২ থেকে ৯০ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন করেছি। সেসময় ৬ বার জেল খেটেছি। ২০১২ সালে ১৮ দলীয় জোট গঠনের শুরু থেকে জোটে ছিলাম। দুবার জেলে গিয়েছি। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমি যে আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম (ময়মনসিংহ-৮) সেখানে গণফোরামের এইচএম খালেকুজ্জামানকে মনোয়ন দেওয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের বঞ্চিত করা হলেও আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি এবং থাকবো।
বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএন শাওন সাদেকী বাংলানিউজকে বলেন, আমি সিলেট-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু জোট থেকে বলা হয়েছে ক্ষমতায় গেলে সুবিধা দেওয়া হবে। সেজন্য আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমরা জোটে আছি, জোটের জন্য কাজ করবো।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ কারী আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, আমি পাঁচটি আসন চেয়েছিলাম। তারা আমাকে চাঁদপুর-৪ আসনটি দিতে চেয়েছিল। সেজন্য আমি নেইনি। আসন না দিলেও আমরা জোটে আছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
এমএইচ/আরআর