বাংলানিউজ: ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আপনাদের পরাজয়ের জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। এই পরাজয়ের পেছনে আপনাদের কি কোনো দুর্বলতা বা অযোগ্যতা ছিল না?
অলি আহমদ: শুধু আমরা না, দেশবাসীই বলছে ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি।
বাংলানিউজ: সারাদেশে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কথা ছিল। আপনারা দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে ফলাফল পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকতে বলেছিলেন। তারা কেন কেন্দ্রে ছিলেন না?
অলি আহমদ: আমার এলাকার একটি কেন্দ্রে পাহারা দিয়েছিল। সেখানে গুলি করে ১১ জনকে আহত করা হলো। তারপর সবাইকে বলে দিয়েছি পাহারার দরকার নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে গিয়ে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
বাংলানিউজ: আপনাদের ভাষায় ৩০ ডিসেম্বর সরকার কারচুপি করে বিজয়ী হয়েছে। এর বিরুদ্ধেতো আপনারা কোনো কর্মসূচিও দেননি।
অলি আহমদ: আমাদের ৩০-৪০ হাজার কর্মী কারাগারে। লক্ষাধিক নেতাকর্মী মামলার আসামি। কারও মনে শান্তি ছিল না। সরকার তাদের সবকিছু হারাম করে দিয়েছে। এখনো বহু জায়গায় বিরোধীদলের লোকদের দোকান খুলতে দিচ্ছে না। কোথাও চাঁদা দাবি করছে। কোথাও গায়েবি মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই সময় কর্মসূচি দিয়ে তাদের ভোগান্তি কাম্য ছিল না। সবমিলিয়ে দেশ এখন একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। জানি না, বঙ্গবন্ধুর কন্যা তাদের কতোদূর সামাল দিতে পারবেন। কারণ এবার কোনো রাজনীতিবিদ এমপি হননি, এমপি হয়েছেন থানার ওসি আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। অতীতে সব সময় জনগণের ভোটে এমপি হয়েছে। এই প্রথম ইউএনও-ওসিরা এমপি বানিয়েছেন। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে।
বাংলানিউজ: প্রতিটি আসনভিত্তিক প্রার্থীদের মামলা করার কথা ছিল। জানামতে এখনো কেউ মামলা করেনি। আপনি কি মামলা করেছেন?
অলি আহমদ: যেহেতু ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, সেহেতু আমরা এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। এটাও বলেছি সর্বকালের নিকৃষ্ট ও জঘন্য এক অপরাধ বর্তমান নির্বাচন কমিশন করেছে। বিচার বিভাগসহ সবকিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। এজন্যই এ ধরনের নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং আমরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি মামলা করে কোনো লাভ হবে না। কারণ তারা সরকারের পক্ষে রায় দেবে। এতে করে সরকার বৈধতা পাবে। সুতরাং আমাদের পুনর্নির্বাচনের দাবি অব্যাহত আছে।
বাংলানিউজ: এখন কী করবেন ?
অলি আহমদ: আপাতত আমরা এলডিপির পক্ষ থেকে নিজেদের দলকে কিভাবে শক্তিশালী করতে পারি, সে বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
বাংলানিউজ: প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় ঐক্যর কথা বলেছেন। এর জবাবে কী বলবেন?
অলি আহমদ: সরকার জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যটা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে এ ব্যাপারে কোনো ফর্মুলা দেওয়া হয়নি।
বাংলানিউজ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একমাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক হয়নি কেন?
অলি আহমদ: বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। অনেকে কারাগারে আছেন। অনেকে নেতাকর্মীদের মামলা ও কারাগার থেকে মুক্তির ব্যাপারে ব্যস্ত আছেন বিধায় বৈঠক ডাকা হয়নি।
বাংলানিউজ: শিগগির ২০ দলীয় জোটের কোনো বৈঠক হবে কি-না?
অলি আহমদ: অনেক দলের নেতারা আমাকে এ বিষয়ে ফোন করেছেন। তারা ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকে করণীয় ঠিক করতে বলছেন। তাদের অনুরোধ করেছি বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলে তারিখ নির্ধারণ করার জন্য। আমি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ করার জন্য মক্কা-মদিনা যাবো। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবো। সেজন্য বড় দল হিসেবে বিএনপিকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলানিউজ: ২০ দলীয় জোটের কোনো দলকে নিয়ে আপনাদের মধ্যে অস্বস্তি আছে কি-না ?
অলি আহমদ: আমার মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তি নেই। আমি জাতীয় ঐক্য চাই। যারা দেশের নাগরিক তাদের মধ্যে বিভেদ-অনৈক্য কাম্য নয়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য এগিয়ে যাওয়া উচিত। আল্লাহ নিজেও ঐক্যের পক্ষে। যারা বিরোধ সৃষ্টি করে তারা আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে।
বাংলানিউজ: আসছে ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার একবছর পূরণ হবে। ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি থাকবে কি-না?
অলি আহমদ: আমি এলডিপির সভাপতি। তিন দিন আগেও জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছি। ইতোপূর্বে তার মুক্তির জন্য আমরা দলীয়ভাবে ১০টি সভা করেছি। এখন বছরের মাথায় বিএনপি কী করবে সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে। কোথাও সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন হলে এগিয়ে যাবো।
বাংলানিউজ: ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরেও অনেক দল একাদশ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে কি?
অলি আহমদ: এলডিপি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ২০ দল যদি আলোচনা করে তাহলে সিদ্ধান্ত হবে। এটা সবার চিন্তার ওপর নির্ভর করে। তবে আমি মনে করি লক্ষ্য যদি এক হয়, তাহলে পথ ভিন্ন হলেও অসুবিধা নেই।
বাংলানিউজ: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আন্দোলন এবং নির্বাচন করা বিএনপির ভুল ছিল বলে নেতাকর্মীদের একটি অংশ মনে করছে, জোটের সঙ্গী হিসেবে আপনার বক্তব্য...
অলি আহমদ: ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিএনপি ঐক্য করেছে। এলডিপি তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য করেনি। এখন তারা ভুল করেছে কি-না সেটা তারাই বলতে পারবে। এর কোনো ওষুধ আমার কাছে নেই।
বাংলানিউজ: ঐক্যফ্রন্ট এ ভোট প্রত্যাখ্যান করলেও জোটের শরিক গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য বলেছেন, তারা সংসদে যোগ দেবেন। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
অলি আহমদ: কোনো সংসদ সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করলে তার সংসদ সদস্য পদ যায় না। রাজনীতিতে এখন বেইমান ও মোনাফেকের সংখ্যা বেশি। অনেকে এটাকে বড়লোক হওয়ার পন্থা হিসেবে ব্যবহার করছে। কারা শপথ নেবে না নেবে এর জবাব আমি দিতে পারবো না। এর জবাব বিএনপি দিতে পারবে।
বাংলানিউজ: উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি সঠিক?
অলি আহমদ: ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়। দু’বার যায় না। যেখানে দিনের বেলায় ভোট হয় না, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বোকামির কাজ হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে কথা বলার কোনো জায়গা নেই। সব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের পেছনে।
বাংলানিউজ: কোনো করণীয়?
অলি আহমদ: মানুষ যখন অসহায় হয়ে পড়ে, আল্লাহ তখন সাহায্য করে। মজলুমের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। বর্তমানে দেশের মানুষ অসহায় এবং মজলুম।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/