বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় বিএনপির নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ ও হট্টগোল করতে দেখা যায়। আলোচনা সভার শেষের দিকে দর্শক সারিতে বসা বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কথা শুনতে চান।
মওদুদ আহমদের বক্তব্য চলাকালে দর্শক সারি থেকে এক নেতা বলে ওঠেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেন, কবে এবং কিভাবে মুক্তি পাবেন? আজকে হলরুম খালি কেন?
প্রথম অবস্থায় মওদুদ তা শুনতে পাননি, তিনি জানতে চাইলে দর্শক সারি থেকে আবারও একই কথা জানতে চাওয়া হয় এবং অনেকেই এই নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘হবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে’।
পরিস্থিতি শান্ত হলে তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। একমাত্র পথ হচ্ছে আন্দোলন। সেজন্যই আমাদের সুপরিকল্পিত আন্দোলন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের কর্মসূচি নিতে হবে’।
তিনি বলেন, এখন আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হবে খালেদা জিয়ার মুক্তি।
এরপর সভাপতির বক্তব্য নিয়ে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বক্তব্য শুরু করলে এক পর্যায়ে আবার দর্শক সারি থেকে আওয়াজ আসে, বিএনপির কমিটি ভেঙে দেন। আজ হল খালি কেন?
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, কর্মসূচি আসবে। ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি ক্ষুব্ধকণ্ঠে বলেন, ‘দাঁড়ান, হলে বসে চিৎকার করলে হবে না’।
পরে পরিস্থিতি সামলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা কেন ভাবছেন ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা ব্যর্থ হননি। আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করতে ১০ বছর ধরে নির্যাতন চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, একুশের চেতনা ধারণ করে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবোই।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা নিজেকে দুর্বল ভাবেন কেন? মনোবল হারাবেন না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কখনও মনোবল হারাতে বলেননি। তিনি বলেছেন, সাহসের সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে। আমাদেরকে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সেজন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
কারাগারে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। অত্যন্ত অসুস্থ। মওদুদ সাহেব বলেছেন। আমিও আজকে গিয়েছিলাম, জেলগেট থেকে ফিরে এসেছি। দেখা করতে পারিনি।
ভাষা আন্দোলনে নিজের অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ করে মওদুদ আহমদ বলেন, একুশের চেতনা ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তারা কখনোই চায় না দেশে কোনো বিরোধীদল থাকুক। দেশে একটি নির্বাচন হয়েছে এটা কেউ বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, যতো করেই বলুক না কেন তারা, ভালো নির্বাচন হয়েছে, এটা সত্য নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা পরিচালনা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি এত বড় একটি রাজনৈতিক দল, সারাদেশে সংগঠন আছে, কর্মী সমর্থক আছে তবু কেন আমাদের নেত্রীর মুক্তি হচ্ছে না?
তিনি বলেন, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামি ও আন্দোলন করতে পারি তাহলে অবশ্যই খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এমএইচ/জেডএস