শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলাকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় সরকারের কাছে এই ব্যাখ্যা দাবি করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা যে জরুরি বিষয়টি বলতে চাই, তা হলো কিছু পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি- আসামের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা বলছেন, সেখানে যে নাগরিকপঞ্জি করা হয়েছে, তাতে যে ১৯ লাখ লোক বাদ পড়েছেন, এর মধ্যে বেশিরভাগই নাকি বাংলাদেশি নাগরিক।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ড. এস জয়শঙ্কর) যখন (ঢাকা সফরে) এসেছিলেন তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (ড. একে আব্দুল মোমেন) সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি তাকে (বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে) নিশ্চিত করেছেন- এটা হচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বিষয়টা হলো যখন তাদের বাংলাদেশের নাগরিক বলা হচ্ছে এবং তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তখনতো সেটা আর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না। এ বিষয়গুলোতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা এক্সপেরিয়েন্সের পরে আমরা উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে আসামের মন্ত্রীর যে বক্তব্য তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। একইসঙ্গে আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দাবি করছি।
সব আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সরকার এখন অর্থনৈতিক দিক থেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে। কারণ এখন তাকে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ জমা আছে, তারা সেটা নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্টে ব্যয় করতে চায়। এতে সরকারের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয়। এ থেকে সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকগুলো, যেসব ব্যাংকে ওই টাকাগুলো জমা আছে। সেই টাকাগুলো যদি ওঠানো হয়, তখন ব্যাংকে লিকুইডিটি ক্রাইসিস দেখা দেবে। আর একটা বড় সমস্যা হবে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করছেন, তাদের যে পেনশন, গ্রাচুইটি তা সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না। সেখানে সমস্যার তৈরি হবে।
এছাড়া সারাদেশের মহাসড়কে টোল আদায়ের বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটারও নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশে এখনো এমন অবস্থা এসে দাঁড়ায়নি যে রাস্তার ওপরে টোল আদায় করতে হবে। এটা জনগণের ওপর অবিচার হবে। বাড়তি একটা চাপ সৃষ্টি করবে।
রংপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা নিয়ে আমাদের বৈঠক চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, বিএসএমএমইউ এর ভিসি খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান। তারা সাংবাদিকদের কাছে একটা বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন যে উনি (খালেদা জিয়া) ভালো আছেন। তার যে সমস্যাগুলো ছিল সেটা অনেক লাঘব হয়েছে। আমরা জানি তার পরিবারের সদস্যরা যখন দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন ম্যাডাম সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি একেবারেই ভালো নেই। তার প্রেসার ওঠানামা করছে। তার ব্লাড সুগার ফাস্টিং এতোটা বেশি যে, অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তার ব্লাড সুগার ১৪-১৫-১৬ এরকম থাকে। এজন্য আমরা খুব উদ্বিগ্ন। তার আথ্রারাইটিসের কারণে শোল্ডারে ব্যথা। এখনো তাকে সাহায্য নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এ অবস্থায় তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে তার পছন্দের জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ১১টায় নয়াপল্টন অফিসে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর যে ৮টি উপজেলায় নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/