ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘নাইকো মামলার রায় গোপনে সরকার চাপপ্রয়োগ করেছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
‘নাইকো মামলার রায় গোপনে সরকার চাপপ্রয়োগ করেছে’ বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: নাইকো চুক্তি দুর্নীতি মামলার রায় গোপন করতে সরকার চাপপ্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, নাইকো চুক্তি দুর্নীতি মামলা এ সরকার করেছে। এর মূল মামলা হয়েছে কানাডাতে।

আন্তর্জাতিক সালিশ নিষ্পতি ট্রাইব্যুনালের রায়ের তথ্য গোপন করে রেখেছে এ সরকার। এখানে আমি ছোট্ট করে বলতে চাই, ট্রাইব্যুনালের রায় যেন জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হয়। সেজন্য ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট স্পেনকে এ রায় প্রকাশ না করতে চাপ দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ রায় হয়েছে। এ মামলায় বলা হয়েছে, কোনো দুর্নীতি হয়নি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্য যারা এ মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ।

শনিবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাসাস ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবীর মুরাদের স্মরণসভায়’ তিনি এসব কথা জানান।  

জিয়া পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম সলিমুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুসহ জিয়া পরিষদের কর্মকর্তা ও সদস্যরা।

প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব বলেন, নাইকো চুক্তি মামলার রায় পরিচালনায় সেখানে যারা ছিলেন তারা সবাই বিদেশি। ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষ করেছে, সেখানে সরকার অভিযোগ করেছেন।  ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়েছে, নাইকো মামলা সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত।  খালেদা জিয়ার এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং এ মামলার সঙ্গে অন্যান্য অভিযুক্ততের দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাননি তারা। এভাবে গ্যাটকো মামলাসহ দুর্নীতির সব মামলাগুলো মিথ্যা মামলা। এছাড়া তারেক রহমানের নামে যে, মামলা দেওয়া হয়েছে,সেখানেও কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তারা দীর্ঘকাল ধরে বলে এসেছেন, তারেক রহমান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আজ পর্যন্ত তারা একটি মামলারও প্রমাণ করতে পারেনি যে, তিনি জড়িত।

তিনি বলেন, সরকার বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে করাত করেছে। একদলীয় ব্যবস্থাকে স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া রাজনৈতিক বিবেচনায়। দেশে সব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক বিবেচনায় লোক নিয়োগ দিয়ে দলীয়করণ করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি উন্নয়ন বাইরে কিন্তু ভেতরে ফাঁকা। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচন নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে বলতে পারেন, তাহলে নির্বাচনে যাচ্ছেন কেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনকে একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণকে নিয়েই এই সরকারকে গণতান্ত্রিকভাবে পরাজিত করবো। এটা আমাদের কাজ, সেটিই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, এতে সফল হবো। কারণ জনগণের শক্তির কাছে সব শক্তি পরাজিত। আমরা আজ যে, রাজনীতি ও আন্দোলন করছি এটা শুধু বিএনপির জন্য নয়, সমগ্র দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে। তাই এ সরকারের পরিবর্তনের কোনো বিকল্প পথ নেই। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংসদ ও দেশকে ধ্বংস করে ফেলছে। বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তারা নানা আয়োজন করছে। এই দানবীয় সরকারকে সরিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবার একটি নতুন নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে জনগণের মুক্তির জন্যে।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য তাকে আমরা কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারিনি। আমরা জানি, আইনগত কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। রাজনৈতিক কারণে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কবীর মুরাদ ছিলেন একজন সংগঠনের সমান। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তা সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিরলস একজন মানুষ। অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য। তার এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে যারা সক্রিয় রাজনীতিতে থাকতে চান, মেধার জগতে বাস করেন তাদের এই সংগঠনে আসার সুযোগ হয়েছে। কবীর মুরাদ শুধু বিএনপির রাজনীতিতে নয় দেশে রাজনীতিতে বেচে থাকবেন তার কাজের মধ্য দিয়ে।

বক্তারা বলেন, কবীর মুরাদ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম কর্ণধার ছিলেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশব্যাপী তার ছিল সুপরিচিতি।  জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের বৃহদাংশকে সংগঠিত করেছিলেন জিয়া পরিষদের ছায়াতলে। জিয়া পরিষদের সভাপতি হিসেবে দেশের গণতন্ত্রচর্চা, জাতীয়তাবাদী দর্শন, ইতিহাস চেতনা ইত্যাদির অনুশীলনে তিনি নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বিএনপির সবপর্যায়ের নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও সমাদৃত। মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নিজ এলাকায় বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে কবীর মুরাদ নিবেদিত হয়ে কাজ করে গেছেন।

জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাসাস ও মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কবীর মুরাদ গত ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়ার পথে ইন্তেকাল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।