ঢাকা: সাধারণত নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে কিংবা পছন্দের বই সংগ্রহে বইমেলায় আসেন বিভিন্ন বয়সী পাঠক।
মেলায় স্বেচ্ছায় রক্তদানের বুথে কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়ে অনেকে বিনামূল্য রক্ত দিচ্ছেন।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা বইমেলা পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রক্তদানকারীদের জন্য পুরো বুথটা পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। রক্ত দিতে ইচ্ছুকদের প্রথমে তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে রক্ত সংগ্রহের দায়িত্বরতরা যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে যারা রক্ত দেন তাদেরকে ডোনার কার্ড সরবরাহ করা হয়। এ কার্ডের মাধ্যমে একজন ডোনার পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে যত বার রক্ত দিয়েছেন তত ব্যাগ রক্ত তিনি নিজের জন্য ফ্রি নিতে পারবেন অথবা তার রেফারেন্সে কারো রক্তের প্রয়োজন হলে অল্প চার্জে রক্ত সরবরাহ করা হয়। পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত সংগ্রহ করতে রক্তের ব্যাগ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচসহ মোট ৭০০ টাকা খরচ হয়। তবে রক্তগ্রহীতাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা সার্ভিস চার্জ রাখা হয় এবং রোগীর আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হলে অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে রক্ত দেওয়া হয়।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিচ্ছিলেন কাউছার আহমেদ। জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বইমেলায় এসেছিলাম বই কিনতে। রক্তদানের এত সুন্দর আয়োজন দেখে ভাবলাম রক্ত দিই। অনেক সময় রক্ত দেওয়ার সুযোগ এলেও নানা ব্যস্ততার কারণে দেওয়া হয়ে ওঠে না। এখানে খুব অল্প সময়ে সুন্দর ব্যবস্থাপনায় রক্তদান করেছি, খুবই ভালো লেগেছে। এর আগে আমি একবার রক্ত দিয়েছিলাম, এটি আমার দ্বিতীয়বার রক্ত দেওয়া। প্রথমবার রক্ত দিতে অবশ্য একটু ভয় লেগেছিল। কিন্তু এখন আমি নিয়মিত রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি আমি সবাইকে রক্ত দিতে উৎসাহিত করি।
কাউসার আহমেদের মতো অনেকেই প্রতিদিন মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে রক্ত দিচ্ছেন। রক্তদানের বিছানায় শুয়ে হাতের মুঠোয় নরম বলটিতে বার বার চাপ দিচ্ছিলেন মাহমুদুর রহমান।
পাশেই তার হাত ধরে দাঁড়ানো তার স্ত্রী ও কন্যা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের সাথে বইমেলায় এসেছি। পাশাপাশি রক্ত দিয়ে যাচ্ছি। বলা যায় এক ঢিলে দুই পাখি মারা। জীবনে অনেকবার রক্ত দিয়েছি। শেষবার রক্ত দেওয়ার প্রায় সাড়ে চার মাস হয়ে গেছে। তাই সুযোগ পেয়ে রক্তদান করছি। অনেকেই রক্তদানে ভয় পেয়ে থাকেন। ভয় পাওয়ার আসলে কিছুই নেই। আমি আটবারের ওপরে রক্ত দিয়েছি এবং যথেষ্ট সুস্থ আছি। আজকে এখানে রক্ত দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পরিবারের সাথে আছি এজন্য। আগে এ ধরনের সুযোগ পায়নি।
এসআই সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১০ সাল থেকে বইমেলায় এই স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি শুরু করেছিল। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা এই কর্মসূচির আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যেই আমরা জনসাধারণের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করছি। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আমরা ৪৫ থেকে ৫০ ব্যাগ পর্যন্ত রক্ত সংগ্রহ করছি। রক্তদাতাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী।
সংগৃহীত রক্তের বন্টন প্রক্রিয়া জানতে চাইলে সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, আমার এখান থেকে যে রক্ত সংগ্রহ করি তা প্রথমে ল্যাবে নিয়ে পাঁচটি পরীক্ষা করাই। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, সিফিলিস ও এইডস। পরীক্ষার পরে যদি সংগৃহীত রক্তে কোনো ধরনের রোগের আলামত না পাওয়া যায় তখন আমরা সংগৃহীত রক্ত পুলিশ ব্লাড ব্যাংকে পাঠানো হয় এবং ওখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলে আমরা রক্ত সরবরাহ করি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
এসকেবি/এএটি