ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

স্থিতিশীল রাজনীতির প্রত্যাশা লেখক-প্রকাশকদের

ফখরুল ইসলাম শাহীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৪
স্থিতিশীল রাজনীতির প্রত্যাশা লেখক-প্রকাশকদের

ঢাকা: মাত্র দু’সপ্তাহ পর শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জোরেশোরে চলছে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি।

কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গত বছরের মেলার মন্দাভাব এবারও ভাবিয়ে তুলেছে লেখক প্রকাশকদের।

সবকিছু ছাপিয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের মেলার আয়োজন সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা।

তবে পরিবেশ শান্ত থাকলে বইমেলা প্রাণবন্ত হবে এমনটিই মনে করছেন তারা।

গত বছরের মন্দাভাব ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবার কেমন বইমেলা প্রত্যাশা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে লেখক আহমাদ মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, যে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি তাতে বইমেলা নিয়ে অনেকটাই শঙ্কা কাজ করছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে রাজনীতিতে যে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা বজায় থাকলে আশা করছি মেলা জমজমাট হবে।

মোস্তফা কামাল বলেন, বইমেলা শুধুই বই বিক্রির মেলা নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এই মেলাকে ঘিরে লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের অনেক প্রত্যাশা। এটি ভণ্ডুল হয়ে গেলে আমাদের আরো একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।

কথাসহিত্যিক জাকির তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে অমর একুশে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে তা মানুষের মনে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগায়।

বইমেলার মাধ্যমে লেখক-পাঠক ও প্রকাশকরা যতটা কাছাকাছি আসতে পারেন তা অন্য কোন কিছুর দ্বারা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিকদের সমালোচনা করে এ কথাসাহিত্যিক বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাংস্কৃতিক মান এতটাই নিচু যে, তারা বইমেলা তথা সৃজনশীল কাজের গুরুত্বই অনুধাবন করতে পারেন না। আশা করি এবার তাদের বোধদয় হবে।

মাওলা ব্রাদার্স‘ এর প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এগারো মাস নতুন বইয়ের প্রচার না করতে পারলেও ফেব্রুয়ারিতে এসে তা পুষিয়ে নিই। কারণ এ মাসে লেখক প্রকাশক পাঠক, মিডিয়া সবাই থাকে সোচ্চার।

তিনি আরও বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতিসহ দেশের প্রতিটি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েকদিন পরিবেশ শান্ত থাকলেও ১৮ দল হঠাৎ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যার প্রভাব বইমেলাতেও পড়বে।

তাই আমরা আশা করি দেশের স্বার্থে বাংলা সংস্কৃতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো গঠনমূলক কর্মসূচি দেবেন।

আফসার ব্রাদার্স এর প্রকাশক ড. আইন-উল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, গত এক বছর ধরে প্রকাশকদের ব্যবসার মন্দাভাব চলছে। মেলাতেও যদি সে ধারা অব্যাহত থাকে
তাহলে প্রকাশকদের পথে বসতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকাশনা সমিতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবসময় বইমেলাকে প্রাণবন্ত দেখতে চাই। আশা করি এবার বই মেলা
জমজমাটভাবে পালিত হবে। কারণ চলতি বছরের জানুয়ারির ১০ তারিখ থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেছে। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থে আর ক্ষতিকর কর্মসূচি ঘোষণা করবে না।

তিনি বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার প্রকাশকরা নিশ্চিন্তে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। কারণ প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণের জন্য ফায়ার ইন্স্যুরেন্সসহ অনেক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

বইমেলাকে ঘিরে পাঠকরা যেমন প্রিয় লেখকের সন্ধান করে থাকেন তেমনি লেখকরাও চান পাঠকপ্রিয়তা। লেখকদের সাথে সাথে প্রকাশকরাও হয়ে ওঠেন উদ্বেলিত। অনেকে বই না কিনলেও মেলায় আসেন প্রিয় মানুষগুলোর দর্শন পেতে।

পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গনে আসা লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীদের জাগাতে সদা তৎপর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।

মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি সন্ধ্যায় আয়োজন হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সাথে থাকে প্রবন্ধ পাঠ, সমালোচনা ও কবিতা আবৃত্তি।

দেশ স্বাধীনের পরপরই ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। কালের পরিক্রমায় সেই বইমেলা হয়ে হঠে দেশের স্বনামধন্য গ্রন্থমেলায়।

এবার মেলা চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন লেখক ও প্রকাশকরা। আর রাজনীতিকরাও তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করবেন এটাই তাদের দাবি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৪
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর (অ্যাক্ট.)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।