ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

কোলাহলে মুখর শিশুপ্রহর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪
কোলাহলে মুখর শিশুপ্রহর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহরের দিন শনিবার ক্ষুদে পাঠক আর দর্শনার্থীদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।

বেলা এগারোটা থেকে শুরু হয়েছে শিশুপ্রহর।

তবে মেলা বসার আগে থেকেই ভিড় জমেছে শিশুদের। অভিভাবক বা শিক্ষকদের হাত ধরে এসেছে এ ক্ষুদে বইপ্রেমীরা।
 
পহেলা ফাল্গুনের পর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বইপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সব বয়সী পাঠক আর বইপ্রেমীদের উপস্থিতিতে গ্রন্থমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। মাসব্যাপী মেলার ঠিক অর্ধেক সময় পার হয়েছে শুক্রবার।
 
শিশু ও অভিভাবকদের স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্তে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা শিশু প্রহর ঘোষণা করে মেলা কর্তৃপক্ষ। ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকেই তা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে কোনো স্টলই খোলা পাওয়া যায়নি।

গত দুইদিন মেলার প্রবেশদ্বার খোলার আগেই বইপ্রেমী, দর্শনার্থীদের গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কিন্তু শনিবার একেবারেই ভিন্ন চিত্র। বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করছে। মেলার প্রবেশদ্বারের সামনে নেই কারো অপেক্ষা।  


বেলা ১১টা থেকে অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় আগমণ ঘটে কিছু ক্ষুদে পাঠক-দর্শনার্থীর। কিন্তু স্টল খোলা না থাকায় মেলা প্রাঙ্গণের ভেতরে তাদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করে থাকতে হয়নি তাদের। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধানে ক্ষুদে পাঠক আর দর্শনার্থীদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।  

কিন্তু তখন পর্যন্ত স্টলগুলো পুরোপুরি খোলা না থাকায় ঝুঁকিতে পড়ে বাংলা একাডেমির ভেতরে ভাষা শহীদদের ভাস্কর্যের নিচে ফুটে থাকা গাঁদা ফুলগুলো। তাদের দুরন্ত ছোটাছুটি সামলাতে অভিভাবকদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তবে স্টলগুলো খোলা হয়ে গেলে অভিভাবকদের স্বস্তি মেলে।

আবার অনেকেই এসেছে সরাসরি স্কুল থেকে। শিক্ষকরা তাদের প্রিয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছেন মেলায়।

রাজধানীর মীরপুরের কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিতের শিক্ষক বরকতুল্লাহ টিপু বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের পাঠ্যসূচির বাইরে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুলের উদ্যোগেই শিক্ষার্থীদের মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে।

তিনি জানান, মেলার শিশুপ্রহরে তারা দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম এবং নবম শ্রেণির ৭৩ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেলায় নিয়ে আসা হবে।

তিনি আরও বলেন, চারপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশকে জানতে, জানাতে শিশুদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডির বাইরে নিয়ে আসা উচিত। তবেই তাদের মধ্যে সমাজ সচেতনতা বোধের সৃষ্টি হয়। সামজ এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা গড়ে ওঠে।
তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ আমাদের ঐতিহ্য। এ মেলার সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিস জানায়, তার আগ্রহ গোয়েন্দা-অ্যাডভেঞ্চারে। জাফর ইকবাল স্যারের বই কিনেছে বলে জানায় নাফিস।


শুক্রবার ছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলার চৌদ্দতম দিন। এ দিন মেলায় আসে ১৯৬টি নতুন বই। বিষয়ভিত্তিক এসব বইয়ের মধ্যে ছিল-গল্প-৩৪টি, উপন্যাস-৪৫টি, প্রবন্ধ-১২টি, কবিতা-৪৫টি, গবেষণা-৩টি, ছড়া-৬টি, শিশুতোষ-২টি, জীবনী-৭টি, রচনাবলী-১টি, মুক্তিযুদ্ধ-১টি, নাটক-৪টি, বিজ্ঞান-৩টি, ভ্রমণ-৩টি, ইতিহাস-২টি, রাজনীতি-২টি, রম্য/ধাঁধা-৬টি, ধর্মীয়-১টি, অভিধান-১টি, সায়েন্স ফিকশন-১টি এবং অন্যান্য-১৭টি।
 
শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর চললেও মেলা চলবে যথারীতি রাত সাড়ে  ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে লালন শাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম ফারুক ও শক্তিনাথ ঝা।

আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে শফি আহমেদ, আবদুল ওয়াহাব, অসীমানন্দ গঙ্গোপাধ্যায় ও রেজাউদ্দিন স্টালিন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

** ভালোবাসায় পূর্ণ হলো গ্রন্থমেলা

বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।