ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইপ্রেম কেবলই কাছে টানে

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
বইপ্রেম কেবলই কাছে টানে আনন্দ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: বইয়ের প্রতি যাদের প্রেম, হরতাল-অবরোধ কি তাদের মেলায় আসতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়? নতুন বইয়ের গন্ধ বইপ্রেমীদের ছুটে নিয়ে আসে গ্রন্থমেলায়। এ প্রেম শুধু কাছেই টানে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বড় প্রেম’-এর মতো দূরে ঠেলে দেয় না।
 
গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বইপ্রেমীদের আনাগোনা ছিলো বইমেলার ভেতরে-বাইরে। প্রথম দু’দিনের চেয়ে অনেকটা সরব ছিলো মঙ্গলবারের বইমেলা। শুক্র-শনি বা ছুটির দিনের মতো হয়তো দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে হয়নি মেলায় আগতদের। তবে লোকারণ্য যে কম ছিলো তা বলা যাবে না।
 
মিরপুর থেকে সন্ধ্যায় বইমেলায় আসা শাহানা হুসাইন বাংলানিউজকে বলেন, অফিসের কয়েকজন সহকর্মীসহ রিকশা করে মজা করে মেলায় এসেছি। দু’টো বইও কিনেছি। তবে মেলায় শুধু বই কিনতেই আসিনি। সন্ধ্যাটা একটু কাটাতেও এসেছি। খাচ্ছি, ঘুরছি, আড্ডা দিচ্ছি। ভালোই লাগছে।
 
আপনজনদের নিয়ে বেড়ানো, আড্ডা-গল্পে মেতে ওঠা আর সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক আয়োজনে সময়টাও দারুণ কাটে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। বই দেখা, কেনার পাশাপাশি ছিল গরম পেঁয়াজু, বেগুনি, চিংড়ির মাথা, ফুচকা, আগুনে পোড়ানো ভুট্টার স্বাদ নেয়া। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে আশপাশের দোকানে মিলে ধোঁয়া ওড়ানো চা, কফি।

দর্শনার্থীদের তুলনায় বিক্রির হার কিছুটা কম হলেও বিক্রেতারা অখুশি নন। যতো সময় যাবে, বেচা-বিক্রিও ততো বেশি হবে বলে তারা আশাবাদী।
 
মিজান পাবলিশার্সের মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, এখন অনেকেই মেলায় এসে দেখছেন। যারা আসছেন তাদের সবাই যে কিনছেন তা নয়, তবে পছন্দ হলে কেউ কেউ কিনে ফেলছেন। বিক্রির পরিমাণ আগামী সপ্তাহ থেকে বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
 
তৃতীয় দিনে ১০১ বই
বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে এসেছে ১০১টি নতুন বই। এর মধ্যে ২৬টি উপন্যাসগ্রন্থ, ১১টি গল্পগ্রন্থ, ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থ, ২৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১টি ছড়াগ্রন্থ, ৪টি শিশু সাহিত্য, ৩টি জীবনীগ্রন্থ, ৪টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ, ৪টি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ, ৩টি ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ, ২টি ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ, ২টি অভিধান বিষয়ক গ্রন্থ, ১টি চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ, ১টি রচনাবলী এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর ৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
 
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, শুদ্ধস্বর থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘তরঙ্গের অস্থির নৌকায়’, অনন্যা থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘ইতিহাসের খেরোখাতা সমগ্র ১’, অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে শাকুর মজিদের ‘ক্যাডেটের ডায়রি’, পীর হাবিবুর রহমানের ‘বুনোকে লেখা প্রেমপত্র’ ও সেলিনা হোসেনের ‘স্বপ্নের বাজপাখি’, বাংলাপ্রকাশ থেকে এসেছে ধ্রুব এষের ‘জলোচ্ছ্বাসের শিশু’, কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে শামীম আল আমিনের ‘টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপনা’, চন্দ্রদ্বীপ থেকে এসেছে আবুল মোমেনের ‘সূর্য ও শিউলি’ ও হরিশংকর জলদাসের ‘কোন এক চন্দ্রাবতী’, আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে তসলিমা নাসরিনের ‘গদ্যপদ্য’, গ্রন্থকানন এনেছে কামাল লোহানীর ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’, উৎস প্রকাশন এনেছে মোস্তফা সেলিমের ‘মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা’, বিভাষ এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘রক্ষা করো হে ভৈরব’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে প্রান্ত পলাশের ‘জরায়ুর কান্না’ ইত্যাদি।
 
আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের তৃতীয় দিন
আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের তৃতীয় দিন সকাল ১০টায় ‘এই সময়ের সাহিত্য : কবিতা’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে ‘সমকালীন বাংলা কবিতা’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুহম্মদ নুরুল হুদা। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, আমাদের কবিতা ব্যক্তিগত অনুভব এবং সমষ্টিক অঙ্গীকার উভয় সত্যকে ধারণ করে নতুন শতকের নতুন দশকের ভাষা ও আঙ্গিকে প্রকাশমান।  

এরপর কবিতা ও সাহিত্যের নানা বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ইকুয়েডরের সাহিত্যিক মারিয়া হেলেন বারেরা, সুইজারল্যান্ডের নাট্যকার তবিয়াস বিয়ানকনে, বেলজিয়ামের কবি জার্মান ড্রুগেনব্রুট, জার্মানির গবেষক হান্স হার্ডার, গবেষক সালাহউদ্দীন আইয়ুব, ভোজপুরি কবি চন্দ্রভূষণ।
 
এছাড়া এ পর্বে কবিতা পাঠ করেন সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ, হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।
 
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বহমান দুঃস্বপ্নের ধারার মধ্যে কবিরাই স্বপ্ন দেখাতে পারেন। একই সঙ্গে দৈশিক ও বৈশ্বিক অনুভব ও অঙ্গীকারকে ধারণ করে কবিরাই পারেন মানবিক পৃথিবীর স্বপ্নকে বাস্তব করতে।  

দুপুর ২টায় দ্বিতীয় পর্বে সমকালীন মালয়েশিয় কবিতা পাঠ ও সাহিত্য আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কবি ও অনুবাদক অধ্যাপক কায়সার হক। কবি আমিনুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ার পয়েট লরিয়েট দাতু ড. আহমেদ কামাল আবদুল্লাহ কামেলা।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মালয় কবিতা ঐতিহ্যের বিস্তারকে ঘটমান বর্তমানের সঙ্গে সমন্বিত করে এক নতুন সাহিত্যরীতির সন্ধান করছে। এ অধিবেশনে কবিতা পাঠ করেন আর্বাক বিন ওথমান, রাজা রাজেশ্বরী সীতা রমণ, ড. ফাজিলা হোসেন, লিলি সিথি মালতা তুলিয়ানা সালতানিসকান্দর, উমর উজাইর প্রমুখ।

দুপুর সাড়ে ৩টায় দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম পর্বে কবিতা পাঠ করেন ডেনমার্কের কবি সিন্ডি লিন ব্রাউন, সুইডেনের কবি পিটার নাইবার্গ, চিনা বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্টের কবি জামি ঝু, ভারতের কবি সুবোধ সরকার, কবি আশিস সান্যাল, মৃণাল বসুচৌধুরী, বীথি চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ হাসমত জালাল প্রমুখ। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ শামসুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ।
 
দ্বিতীয় অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠে অংশ নেন রুবী রহমান, আলতাফ হোসেন, কাজী রোজী, নূহ-উল আলম লেনিন, সানাউল হক খান, শিহাব সরকার, কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, হালিম আজাদ, দিলারা হাফিজ, রফিকুল হক, ফারুক মাহমুদ, নাসির আহমেদ,  আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, আমিনুর রহমান সুলতান, তারিক সুজাত, শামীম রেজা, ওবায়েদ আকাশ, পিয়াস মজিদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ শামসুল হক।
 
মূলমঞ্চের আয়োজন
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ষাট বছরে বাংলা একাডেমি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ভারতের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, ভূঁইয়া ইকবাল, ড. করুণাময় গোস্বামী এবং ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।  

** সন্ধ্যার বইমেলা যেন মিলন মেলা
** মেলায় প্রধানমন্ত্রীর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।