অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ঠাণ্ডা বাতাস রয়েছে খানিকটা। থেকে থেকে ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে সে বাতাস।
ছিমছাম পরিবেশে ঘুরে ঘুরে গ্রন্থমেলার দুই প্রাঙ্গণ (বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মাতাচ্ছেন আগতরা। আবার কেউ বা মেতেছেন প্রিয় লেখককে পেয়ে একটু ছবি তোলা, কথা বলা কিংবা অটোগ্রাফের প্রচেষ্টায়।
এমনই চিত্র দেখা গেলো গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে। শুক্রবার ছুটির দিনের আগে শেষ কর্মদিবসের অফিস শেষে মানুষের আগমনটা সন্ধ্যায় একটু বেশিই চোখে পড়ার মতো।
বই কেনা-দেখার পাশাপাশি আড্ডা-খোশগল্পের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে মেলার দু’টি প্রাঙ্গণ। তবে গ্রন্থমেলাকে শুধু বই কেনা বা ঘোরাঘুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে দেখছেন না পাঠক ও লেখকরা। এটিকে সামাজিক মেলবন্ধনের স্থান হিসেবেও বিবেচনা তাদের।
শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি সেই শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯৭৫ সাল থেকে মেলায় আসছি। এ মেলা আমাদের সবাইকে একত্রিত করে। এটি সামাজিক মেলবন্ধনের জায়গা। এখানে বিপণন বড় কথা নয়, মানুষে মানুষে মিলনই বড়।
বিশিষ্ট ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন বাংলানিউজকে বলেন, মেলার পরিসর বেড়েছে। কারণ, মানুষ বেশি আসছেন। দিনে দিনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকাশকও বৃদ্ধি পেয়েছেন, এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বইও ছাপা হচ্ছে। এসবই প্রমাণ করে, বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কতোখানি।
বইমেলাকে বাঙালির নবচেতনার নবায়ন বলেও মত দেন রিটন।
তিনি বলেন, মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বই কেনা কিংবা ঘোরাঘুরির উপলক্ষই নয়, এটি আমাদের সামাজিক মেলবন্ধন আরও দৃঢ় করারও জায়গা। গ্রন্থমেলায় আমাদের চেতনা কাজ করে, ভালোবাসা কাজ করে, মানুষে মানুষে জেগে ওঠার প্ররণা জোগায়।
বইমেলাকে বাঙালির অপ্রতিরোধ্য চেতনা হিসেবে দেখেন সংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এক করার জায়গা এই মেলা। এটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। তবে মানুষে মানুষে মেলবন্ধনও আরও বেড়ে উঠবে।
সন্ধ্যার পর স্ত্রী এবং ছোট ভাইকে নিয়ে মেলায় এসেছেন অ্যাডভোকেট সুজন খান। উপন্যাসের বইয়ের দিকে তাদের আগ্রহ। মূলত স্ত্রীর বই পড়ার ঝোঁক মেলায় এনেছে তাকে। তার স্ত্রী সাবিহা আফরিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি একজন গৃহিণী। তবে কাজের ফাঁকে, অবসরে বই পড়ি। এটা ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বকুল, সজীব, হাবিব ও সাব্বির। প্রত্যেকের হাতভরা বই। তারা বললেন, মূলত আইন বিষয়ক বিভিন্ন বই খুঁজে খুঁজে কিনলাম। মেলার পরবর্তী দিনগুলোতে আসবো, গল্প-উপন্যাস যা ভালো লাগে ফের কিনবো।
‘মেলায় এসে খুবই ভালো লাগলো। বিভিন্ন লেখকদের সঙ্গে ছবিও তুললাম, কথাও বললাম’- যোগ করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬
আইএ/এএসআর