ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২১ মে ২০২৫, ২৩ জিলকদ ১৪৪৬

বইমেলা

কোলে-পিঠে চেপে মেলায় ঘুরে বেড়ানোর দিন

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪১, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
কোলে-পিঠে চেপে মেলায় ঘুরে বেড়ানোর দিন ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: সোনামণিদের পদচারণায় মুখর বইমেলা প্রাঙ্গণ। কচি কচি পায়ে মেলা প্রাঙ্গণ দাবিয়ে বেড়াচ্ছে শিশুরা।

তাদের নরম-কোমল হাতে হাতে ছড়া-ছবির রঙিন বই।   বাবা-মায়ের হাত ধরে কেউবা কোলে-পিঠে চেপে বইমেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে!

ছোট্ট সোনামণি মায়শাকে দেখা গেলো বাবার ঘাড়ে চেপেছে। ওইদিকে হালুম-হালুম শব্দে সিসিমপুর মঞ্চ মাতোয়ারা। দূর থেকে শুনেই তালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মায়শা। সঙ্গে চলেছে বই দেখাদেখি। মেয়ের আনন্দ দেখে বাবাও বেশ মেতেছেন। দু’জন মিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বর ঘুরে ঘুরে কিনছেন বই। ইতোমধ্যে হাজার খানেক টাকার কেনাও শেষ। কিনবেন নাকি আরও অনেক।

undefined



কথা বলে জানা গেলো সেই নাটোর জেলা থেকে এসেছেন তারা। শুধু বাবা-মেয়ে মিলে বই কিনতেই উত্তরের এই জেলা থেকে দীর্ঘ সময় বাসে জার্নি করে এখানে আসা। বইয়ের জন্য এতোটা ভালোবাসা! কী করে সম্ভব বলেন তো, এমন প্রশ্ন করায় বাবা আতিকুর রহমানের উত্তর, ‘বাসাতে বইয়ের ছোট-খাটো পাঠাগার গড়ে তুলেছি। বলতে গেলে মায়শার খেলার সঙ্গী, অবসরের বন্ধু বই। বিভিন্ন রঙিন বইয়ে ভরপুর তার পড়ার টেবিল। আর আমিও বই পড়ি প্রচুর। তাই সময় করে ঢাকায় চলে আসা, উদ্দেশ্য অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ’

undefined


মায়শার মা লায়লা আরজুমান বাংলানিউজকে জানালেন, ওর বাবা (আতিকুর) বই পড়তে অনেক ভালোবাসেন। প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকেও সেই ভালোবাসায় বড় করে তুলতে চান!’

ততক্ষণে ওদিককার শব্দ আরও বেশি কানে এলো। চিৎকার-চেচামেচি শিশুদের! এ কী অবস্থা! মেলায় সিসিমপুর মঞ্চে নাচ্ছে টুকটুকি, হালুম ও ইকরি। তাই দেখে দর্শক সারিতে মন্ত্রমুগ্ধ শিশু-কিশোরের লাফালাফি। টুকটুকি জানালো, বই পড়া বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য। হালুম, ইকরিও ঠিক তাই।

undefined



‘চলছে গাড়ি সিসিমপুরে..., চলেছে গাড়ি, সিসিমপুরে..’ এমন গানে পুরো দর্শক সারির শিশুরা দাঁড়িয়ে থেকেও যেন আনন্দে চলমান হয়ে গেলো এই একটি মুহূর্তের জন্য!

শুধু বই কেনা নয়, গানের তালে-তালে নেচে-নেচে উদযাপন শিশুপ্রহর। কোমলমতি শিশুরা ঘাড়ে চেপে-কোলে উঠে উপভোগ করে সিসিমপুর।

undefined


আরেক পাশে স্টল প্রগতি পাবলিশার্সের। কিছু সংখ্যক শিশু-কিশোরের জটলা সেখানে। দ্রুত গিয়ে পাওয়া গেলো প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার, প্রকাশক আসরার মাসুদকে। তার সঙ্গে কথা হয় কিছুটা সময়। কী এমন জাদু জানেন যে, এতো শিশুর ভিড়? জবাবে তিনি শিশুদের প্রতি প্রকাশকদের দায়িত্বরোধের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি শুধু শিশুদের বই করি। করে আসছি বছরের পর বছর ধরে। এটি আমার দায়িত্ব-কর্তব্য বলে মনে করি। একটি পছন্দের বই বড়দের হাতে তুলে দিতে যে আনন্দ, তার চেয়ে হাজার গুণ আনন্দ সোনামনিদের হাতে তুলে দেওয়ায়। ’

undefined



ভিড় ছিল টোনাটুনি স্টলেও। এখানকার বিক্রয়কর্মীরা তো দম ফেলতে পারছিলেন না, এতো শিশু-ভিড়ে। পলাশ, পারভেজ, শিমুল নামে তিন বিক্রয়কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধুই বাচ্চাদের জন্য আমাদের আয়োজন। তারা তো ভিড় করবেই, এটাই আমাদের আনন্দ। ’

ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তানহা কিনেছে মোস্তফা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সে বাংলানিউজকে বলে, ‘মা বলেছে, মজার মজার বই পড়ার পাশাপাশি যেন মুক্তিযুদ্ধের বইও পড়ি। তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছি এই বইটা। ’

undefined


সঙ্গে থাকা তার মা লাবণী আক্তার বলেন, ‘বই যেন এমন হয়, যাতে শিশুরা পড়ে সৃজনশীলতা জাগে এবং অনেক কিছু শিখতেও পারে। ’

গৌতম দেবনাথ তার প্লে-গ্রুপে পড়ুয়া ছেলে রক্তিমকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হাতে ভূতের বই, এতো ছোট বাচ্চাকে এতো কঠিন বই? এমন প্রশ্নে উত্তর, ‘আমি ওকে পড়ে পড়ে শোনাবো। আর ওর নিজের জন্য নিয়েছি ছবিযুক্ত বাঘ-ভাল্লুকের গল্প। যে গল্পে ও নিজের ভুবনে হারিয়ে যাবে। তখনই তো বই পড়া সার্থক হবে ছেলেটার...। ’

undefined


বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
আইএ/এমজেএফ

** সময়টা শুধু শিশুদের
** বইমেলায় রং-তুলি, শিশুদের লুটোপুটি
** বাংলা একাডেমিতে চলছে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
** বাংলা একাডেমির শিশু প্রতিযোগিতার ফরম বিতরণ শেষ বুধবার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।