ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

বইমেলা

শিশুপ্রহরের অবাকশিশু ‘ফুল রবিউল’! (ভিডিওসহ)

ফটো: দীপু মালাকার; স্টোরি: সাজেদা সুইটি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:০০, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬
শিশুপ্রহরের অবাকশিশু ‘ফুল রবিউল’! (ভিডিওসহ) ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: হুডওয়ালা লাল সোয়েটারের সামনের দিকটি খোলা, খালি গা, খালি পা, পরনে প্যান্ট, হাতে ছোট্ট ফুলের তোড়া। এদিক-সেদিক ব্যস্ত হয়ে ছুটে সবকিছু দেখে নিচ্ছে সে।

 
 
শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম শিশুপ্রহরে দেখা মেলে তার।

undefined


ফর্সা চেহারার ছোট্ট শিশুটির উজ্জ্বল চোখে দৃষ্টি আটকায়। বড় বড় মানুষের ভিড়, কিছুতেই শিশুকর্নারের মঞ্চে খেলতে থাকা পাপেটগুলো দেখতে পাচ্ছিলো না সে। চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করছিলো ইকরি-হালুমদের নাচ।
 
আলাপ জমাতে গেলে না তাকিয়েই নাম জানায়, ‘রবিউল’। মঞ্চে উঠতে চায় কিনা জানতে চাইলেও না তাকিয়ে বলে, পাও ময়লা, উঠতে দিবো না।

undefined


ওরই বয়সী অন্য শিশুরা এসেছে মা-বাবার সঙ্গে। দেখতে সমস্যা হলে বাবা ঘাড়ে তুলে শিশুসন্তানকে দেখাচ্ছেন মঞ্চের অনুষ্ঠান। সেদিকেও চোখ যায় লাল সোয়েটার পরা রবিউলের। তবে এ নিয়ে চোখে কোনো কষ্ট বা আক্ষেপ ফোটে না তার। সবকিছুই যেনো উপভোগ্য তার কাছে।
 
সাংবাদিকদের চোখ এড়ায় না রবিউলের কর্মকাণ্ড। ফটো-সাংবাদিকরা স্নেহে জড়ান, নানা প্রশ্নে তাকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। কেউ বইও কিনে দিলেন। নানা পোজে ছবি ওঠে, এরপর আবার নিজের ব্যস্ততায় ফেরে রবিউল, ঘুরে ঘুরে স্টলের বই দেখা।  

undefined


স্টলগুলো ঘুরছে সে, ছোটদের বইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি দেখছে। হাতে ময়লা, বই ধরলে বকা খেতে হতে পারে ভেবে চোখে দেখেই তৃপ্তি মেটায় কখনও কখনও।
 
তাই বলে দুষ্টুমি তার থেমে নেই। তারই বয়সী অন্য শিশুটি বেছে বেছে বই নিচ্ছে, পাশ থেকে অধৈর্য্য রবিউল ধমকে ওঠে, হায়রে! লাল রঙেরটা নেও! বোকা পাবলিক!’ বলেই দৌঁড়।

undefined


দ্বিতীয় শিশুপ্রহর শনিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) শিশু কর্নারে গিয়ে পাওয়া গেলো না তাকে।  
 
নানাজনকে জিজ্ঞেস করে এক সময় জানা গেলো, মেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে টিএসসির দিকের কোণায়। তিনটি শিশু রবিউলের ছবি দেখেই বলে ওঠে, আরে! এইডাতো ফুল রবিউল! আপনের কিসু নিয়া গেসেনি?
 
কিছু নেয়নি, বলে আরেকটু এগোতেই পাওয়া গেলো, আজ পোশাক ভিন্ন। হাতে ফুলের বালতি। আলাপ করতে চাইলেই জানতে চায়, তাইলে কী দিবেন?

undefined

নিজে থেকেই কানে কানে কয়েকটি চাহিদার কথা জানিয়ে আলাপে রাজি হয়।
 
জানালো, পুরো নাম রবিউল আলম, বয়স তিন বছর। মোবাইল ফোন দেখেই সেলফি তোলার আব্দার। কিন্তু ছবিতে জিভ বের হয়ে থাকায় হেসে কুটি কুটি হয়ে নাকি কান্না জুড়ে দেয়, ডিলিট কইরা দ্যান, ডিলিট কইরা দ্যান! কেমুন দ্যাখা যাইতেসে!

undefined


কলম, খাতা, টাকা- নানা আবদার করে একসময় রবিউল বলে, আইচ্ছা, কিচ্ছু দেওন লাগবো না, কার্টুনের বই কিন্যা দিবা পরে!

undefined


আরও জানালো, এ মেলায় তার কয়েকটি বই হয়েছে। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কেউ কেউ আদর করে কিনে দেয়।
 
হঠাৎ পেছন থেকে ঝাপটে ধরে, বলে, আম্মা আইতাছে, তুমি কিন্তুক কইবা না যে তোমারে এগুলা দিতে কইসি!
 
মাথায় শাড়ির আঁচল টানা এক নারী লাজুক মুখে এগিয়ে আসেন। রবিউল ইশারায় বলে, আম্মা!

undefined


সেই সঙ্গে আবারও সাবধান করে, কইবা না কিন্তুক! মায় কইলাম আমারে বকবো!
 
নুরজাহান বেগম টিএসসিতে ফুল বিক্রি করেন। স্বামী জিয়াউর রহমান যখন যে কাজ পান, তাই করেন। থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীর চর। প্রতিদিন সকালে টিএসসি আসেন, ফুল বিক্রি শেষে রাতে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

undefined


বড় মেয়ে জয়া প্রথম শ্রেণীতে পড়ে, এরপর ছেলে তোফায়েল আলম ও রবিউল আলম।
 
সন্তানদের পড়াতে চান নুরজাহান। তাই তার অনেক খাটুনি। রবিউল সুযোগ পেলেই বইমেলায় ঘোরে, তিনিও শাসন করতে যান না। নুরজাহান চান, ছেলে বই ভালোবাসুক।
 
হাসিমুখে বলেন, বই পড়ার অভ্যাস হইলে তো ভালো, চোর-ডাকাত য্যান না অয়। আমি গরিব মানুষ, দামি স্কুলে পড়াইতে পারুম না। এইখানে পার্কের স্কুলে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) সপ্তায় তিনদিন পড়ে। কার্টুন ছবির বই, এমনি গল্পের বই দ্যাখলেই তাকায়া থাকে।
 
রবিউল নিজের বয়স তিন বছর জানালেও নুরজাহান জানালেন ছেলের বয়স চার।  

undefined


ফুল বেচি দেইখা কেউ কেউ আমারে ‘ফুল রবিউল’ ডাকে। ইনবাসিটির (ইউনিভার্সিটি) মামারা আদর কইরা পিচ্চি ডাকে, বলে সে।
 
বড় হয়ে কী হতে চাও, জানতে চাইলে রবিউলের প্রশ্নমাখা উত্তর, বড় হইয়া বড় হমু, আর কী হমু? ম্যালা কার্টুন বই কিনুম! হি হি হি…!

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।