ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শাকুর মজিদের নতুন চার বই, দু’টি ভ্রমণের

তানিম কবির, ফিচার সম্পাদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬
শাকুর মজিদের নতুন চার বই, দু’টি ভ্রমণের

বইমেলা থেকে: বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শাকুর মজিদের নতুন চারটি বই। এর মধ্যে দু’টি ভ্রমণ কাহিনী, একটি নাটক ও একটি স্মৃতিগদ্য।

লেখকের ভাষ্যমতে, ‘ভ্রমণ কাহিনী দুটো অনেক শ্রমলব্ধ কাজ ছিল’।

প্রথম কলকাতা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘১০ সদর স্ট্রিট: রবীন্দ্রনাথের কলকাতা’ বইটি প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং মিশর ভ্রমণ নিয়ে লেখা ‘ফেরাউনের গ্রাম’ বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ।
 
অন্য দুই বইয়ের একটি শাকুর মজিদের লেখা নাটকের সংকলন ‘নির্বাচিত নাটক’ প্রকাশ করেছে অয়ন প্রকাশন এবং স্মৃতিগদ্য ‘মাথিউরার গেন্দাফুল কিংবা ফৌজদারহাটের মেরিগোল্ড’ প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরীর শাখা প্রতিষ্ঠান অক্ষরপত্র।
 
ভ্রমণ কাহিনী ফেরাউনের গ্রাম সম্পর্কে শাকুর মজিদ বলেন, ২০০৯ সালে একসঙ্গে গিয়েছিলাম ইস্তাম্বুল আর মিশর। ইস্তাম্বুল নিয়ে ২০১২ সালে বের হয় ‘সুলতানের শহর’। মিশর নিয়ে লিখতে সময় লেগেছে অনেক। মিশর তত্ত্ব, কোরান ও বাইবেলের তথ্য যাচাই করা আর ৫ হাজার বছরের মিশরীয় ফারাও রাজাদের কাহিনী আত্মস্থ করতে অনেক সময় লাগে। মাঝে বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে কয়েকটি চ্যাপ্টার ছাপাও হয়েছিল। সেসব মিলিয়ে বইটি যখন তৈরি হয়ে গেল, তাতে আমার নিজের তোলা ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবিগুলো সংযোজন করে পুরো বইটি চাররঙা ছাপা হলো। প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। অনেক কমিয়ে দাম রেখেছে, ৫০০ টাকা।
 
তিনি বলেন, বইটির নাম রেখেছি ফেরাউনের গ্রাম। প্রচ্ছদে দ্বিতীয় রামসিসের একটি যুদ্ধ অভিযানের খোঁদাই চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এই ফারাওই সম্ভবত সেই ফারাও, যার সঙ্গে মূসা (আ.) এর যুদ্ধ হয়েছিল বলে ইতিহাসবেত্তারা নিশ্চিত হয়েছেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি প্রাচীন মিশরীয় লেখচিত্র আছে। মন্দিরের গায়ে রাজাদের স্তুতি লেখা এই চিত্র। ভেতরে সবগুলো ছবিই আমার তোলা। প্রছদের পটভূমি আর কাগজের পটভূমিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় প্যাপিরাসের ছাপ। যেন বা প্যাপিরাসের ওপরই লেখা হলো মিশর নিয়ে আধুনিক পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট।
 
শাকুর মজিদ জানালেন, এটি তার ১৯তম ভ্রমণকাহিনী।

এর আগে প্রথমা থেকে মেলায় এসেছে শাকুর মজিদের ১৮তম ভ্রমণগ্রন্থ ‘১০ সদর স্ট্রিট: রবীন্দ্রনাথের কলকাতা’। এ বইটি সম্পর্কে লেখক বলেন, মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৯৯০ সালে কলকাতা দিয়ে শুরু হয়েছিল আমার প্রথম ভ্রমণ। এরপর গত ২৫ বছরে অন্তত ৩০টি দেশ ভ্রমণ করেছি। কিন্তু কলকাতা নিয়ে লেখা হয়ে ওঠেনি, প্রয়োজনও মনে করিনি। কলকাতাকে বিদেশ মনে হয় না, আবার নিজের দেশও না। তবে ২০১২ সালে সদর স্ট্রিটের এক বাড়ির সামনে রবীন্দ্রনাথের একটা মূর্তি দেখে কৌতুহল হয়। জানতে পারি, সামনের ১০নং বাড়িটি রবীন্দ্রনাথের কাছে অনেক কিছু ছিল। কলকাতাকে সিটি অব জয়, সিটি অব বুক্স, সিটি অব প্যালেস, নানা নামে ডাকা হয়েছিল। আমি দেখি, সোয়া তিনশ’ বছর পর কলকাতা এসে দাঁড়িয়েছে রবীন্দ্রনাথের শহরে।
 
আর রবীন্দ্রনাথের বিকাশের মূলে আছে এই বাড়ি। আমার ২৫ বছরের কলকাতা ভ্রমণ গিয়ে ঠেকে রবীন্দ্র ভ্রমণে। আর খুঁড়তে খুঁড়তে বের করে ফেলি অনেক কিছু, যা আমার নিজেরই জানা ছিল না। এসব নিয়ে এই বই। বইয়ের প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে আমার নিজেরই তোলা ১০ সদর স্ট্রিটের নিচতলার খিলান দিয়ে দেখা ওই সড়কের একটা ছবি। এক টানা রিকশা পড়ে আছে রাস্তার ওপর, এই। অশোক কর্মকার এটার ডিজাইনার, দাম রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
 
অন্য দু’টি বইয়ের মধ্যে ‘নির্বাচিত নাটক’ প্রসঙ্গে শাকুর মজিদ বলেন, আমার সাহিত্য জগতে প্রবেশই হয়েছিল নাটক লেখা দিয়ে। ২০ বছর বয়সে প্রথম নাটক প্রচারিত হয়েছিল সিলেট বেতারে। এরপর টেলিভিশন, মঞ্চ, সব জায়গাতেই অল্প অল্প লিখেছি। এবার বের হলো আমার নাটকের বই ‘নির্বাচিত নাটক’। সাতটি নির্বাচিত টেলিভিশন নাটক আর মঞ্চ নাটক ‘মহাজনের নাও’সহ মোট আটটি নাটক নিয়ে এ বই ছেপেছে  অয়ন প্রকাশন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজীব রায়। ২৮৮ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ৪৫০ টাকা। এ বই প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর আমার ৫০তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে।
 
‘মাথিউরার গেন্দাফুল কিংবা ফৌজদারহাটের মেরিগোল্ড’ বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার বেশিরভাগ লেখাই আমার জীবন থেকে নেওয়া। নাটক ছাড়া কথাসাহিত্যে যা লিখেছি, হয় ভ্রমণ কাহিনী, নয় আত্মস্মৃতি নয় স্মৃতিকথা হিসেবে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে আমার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩২টি। তার মধ্যে ভ্রমণগ্রন্থ ১৯টি, আর নানা রকম স্মৃতিকথা পাঁচটি। এর সঙ্গে যুক্ত হলো নতুন স্মৃতিগদ্য ‘মাথিউরার গেন্দাফুল কিংবা ফৌজদারহাটের মেরিগোল্ড’। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ১২টি স্মৃতিগদ্য নিয়ে এই বই। রাজীব রাজু এঁকেছেন প্রচ্ছদ, দাম  ১৩০ টাকা। এ বইটিতে আমার মাথিউরা গ্রামের বাড়িতে নিজের বাড়ির দেয়ালে আমার যে ছায়া পড়েছে তা দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়েছে।
 
শাকুর মজিদ জানান, নতুন চারটি বইয়ের তিনটির প্রচ্ছদেই তার নিজের তোলা আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
 
বই প্র্রকাশের জন্য একুশের বইমেলাকেই কেন বেছে নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বই প্রকাশের জন্য আসলে কখনোই আমি বইমেলার সময় বেছে নেই না। প্রকাশকদের কাছে অনেক আগেই বই থাকে। তারাই বরং দেরি করে এটা বইমেলার সময় পর্যন্ত নিয়ে আসেন। আমি সারা বছর ধরেই লিখি। দুই তিন বছরের লেখা জমা হলে এক একটা বই হয়ে যায়, এই যা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
টিকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।