ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

তরুণ-তরুণীরাই মেলার ভ্রমর

সাজেদা সুইটি ও সৈয়দ ইফতেখার আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
তরুণ-তরুণীরাই মেলার ভ্রমর ছবি : শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ঠিক সেভাবে জমজমাট রূপ পাওয়া না গেলেও তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা ছিল বেশি। বই কেনা নয়, বই দেখা এবং ঘোরাফেরাতেই সময় তাদের পার।


 
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, অফিস শেষে ফেরা ব্যক্তি এবং স্কুল-কলেজের কিশোর-কিশোরীদের সাবলীল চলাফেরায় মেলায় দেখা দেয় ভিড়। তবে তা অন্তত অন্য আর আট-দশদিনের মতো ছিল না।
 
সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার ৮ম দিনে বিস্তারিত আলাপ হয় কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগের মতো এতো শক্তি পাই না, তাই ঘোরাও হচ্ছে না। তবু তো অষ্টম দিনে তৃতীয় দিনের মতো এলাম।
 
আসাদ চৌধুরী বলেন, গ্রন্থমেলায় ঘুরতে সব সময়ই ভালো লাগে। মানুষের মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ কেমন জানি লক্ষ্য করছি এবার। তারা ছুটে আসতে চাইছেন, ছুটেও আসছেন।
 
এদিন মেলায় এসেছে ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত মাহমুদ মেননের অনুবাদ গ্রন্থ ১৯৮৪: জর্জ অরওয়েল। বইটি সম্পর্কে এবং সোমবারের বেচা-বিক্রির বিষয়ে ঐতিহ্যের স্টল ম্যানেজার আমজাদ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে বলেন, অনুবাদ বইয়ের চাহিদা রয়েছে ভালো। আশা করছি, ১৯৮৪ ভালো বিক্রি হবে।

ইতোমধ্যে বইটির কথা অনেকে এসে বলে গেছেন। আর কর্মদিবস হিসেবে আমাদের আজকের (সোমবার) বেচাবিক্রি তেমন একটা খারাপ হয়নি। তবে আগতদের তুলনায় কমই বলা চলে। যারা এসেছেন, তারা বই খুবই কমই নিয়েছেন মনে হয়।
 
বিক্রি-বাট্টা বিষয়ে অন্যপ্রকাশের সহকারী ম্যানেজার তুষার খান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে আমাদের। অন্যপ্রকাশে সব সময়ই চাহিদা থাকে বলে বিক্রির হারটা ভালো। তবে ভিড় বেশি হলে বা ছুটির দিনে আমাদের বিক্রির হার তিন-চারগুণ ছাড়িয়ে যায়।
 
জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে বসে বেচা-বিক্রি দেখছিলেন কর্ণধার মনিরুল হক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের ১৪০টি নতুন বই আসছে এবার। ইতোমধ্যে ১১০টি চলেও এসেছে মেলায়। যার মধ্যে উপন্যাস এবং প্রবন্ধের বই বেশি।
 
মনিরুল হক বলেন, সোমবারের বিক্রি অন্যদিনের তুলনায় কম হলেও আশা ছাড়ছি না। কারণ, বিশ্বাস আছে আগামী শুক্রবার থেকে মেলা যেমন জমবে তা আর কমবে না।
 
তিনি আরও বলেন, এবারের মেলার পরিসর তো অনেক বড়। তাই মানুষকে ঘুরতেও একটু সময় দেওয়া উচিত, শুধু কিনে নিলেই তো আর চলবে না। মনে করেন, আজ ছিল সেই ঘোরার দিন! সামনে পহেলা ফাল্গুন, তরুণ-তরুণীরা ঘুরে গেলেন আরকি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অমিত মেলায় এসেছিলেন বই কিনতে। কিনলেনও কিছু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, স্টলে স্টলে আজ বিক্রি কম। এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে বই কিনতে চলে এলাম।
 
তবে চিত্রটা ব্যবসায়ী রাকিবের জন্য ভিন্ন। তার সঙ্গী অনুজ আদনান, মেহেদী, আবদুল্লাহ, শামীম, মহিন এবং পরান। তারা জানালেন, একটু ভালো সময় কাটাতেই বইমেলায় আসা। এসে যে বই কিনতেই হবে, তা নয়। বই দেখা আর ঘোরাও তাদের কাছে মুখ্য।
 
জামালপুর থেকে মেলায় আসেন দুই বন্ধু মাসুম ও দিশা। দিশা বাংলানিউজকে বলেন, পড়ার অভ্যাস যেটুকু আছে তা আরও বাড়াতে চাই, সে জন্যই মেলায় ছুটে আসা। মেলায় এলে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে, নতুন তথ্যগুলো যে পাই, তাও কি কম।
 
বাংলা একাডেমি তথ্যকেন্দ্র বলছে, গ্রন্থমেলায় ০১ থেকে ০৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাতদিনে একাডেমির নিজস্ব স্টলে মোট ১৭ লাখ ৫ হাজার ৮০ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মেলার আষ্টম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৫টি এবং ৬টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস ১৯টি, কবিতা ১৫টি, শিশুসাহিত্য ‍৭টি, প্রবন্ধ ৫টি, জীবনী ৩টি, গল্পের বই ২টি, গবেষণাগ্রন্থ ২, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১টি, বিজ্ঞান ২টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ৩টি, রম্য/ধাঁধা ২টি এবং অন্যান্য মোট ১২টি।
 
সোমবারের বিকেল-সন্ধ্যা
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা ‘একাডেমির হীরকজয়ন্তী : পাঠ্যপুস্তক রচনা, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুব্রত বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেন রতন সিদ্দিকী, মলয় ভৌমিক ও নূরুন্নাহার মুক্তা।
 
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকের মান একটি দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলা একাডেমি এ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে জাতীয় শিক্ষা ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। ভবিষ্যতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে সংখ্যার পাশাপাশি মানের দিকটিও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবীর সরদারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ইয়াকুব আলী খান, ইয়াসমিন মুশতারী, লীনা তাপসী খান, সুমন মজুমদার এবং বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কেশব সরকার (তবলা), হোসেন আলী (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার),  মোঃ আজিজুর রহমান (কী-বোর্ড) এবং বিশ্বজিৎ সেন (মন্দিরা)।
 
গ্রন্থমেলা বিষয়ে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলন
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬’র প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। চলমান মেলা বিষয়ে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।
 
সংবাদ সম্মেলনে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান গ্রন্থমেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং একাডেমির পরিচালকরা।
 
মঙ্গলবারের আয়োজন
 মেলার নবম দিনে মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশের প্রকাশনা কার্যক্রম : অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
 
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশ নেবেন শিল্পী রফিকুন নবী, কবি তারিক সুজাত, লেখক রেজানুর রহমান এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখক-গবেষক ইমানুল হক। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পী হাশেম খান। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
আইএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।