ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মনে হয়েছিল ‘মেলা জমে গেছে’!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭
মনে হয়েছিল ‘মেলা জমে গেছে’! বই নিয়ে বইমেলায় আসা ছোট্ট শিশুর কসরত

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: বইটা কিছুতেই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না। কখনো ঝুঁকে পড়ে প্রাণপণ চেষ্টা বই রক্ষার। কখনো মাথার উপর তুলে বইয়ের ওজনের সঙ্গে পেরে ওঠার লড়াই। কখনো বা দুই হাতে জাপটে ধরে ভোঁ-দৌড়।

দুই বছর তিন মাস বয়সী ফারিস্তা জান্নাত জেরিনের বই নিয়ে এই কসরত দেখতে জড়ো হয়ে গেছে বেশ কিছু লোক। স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে মর্ত্যে নেমে আসা ফুট-ফুটে এই দেবশিশুর হাতের বইটি ওর ওজন ও আকৃতির সমান প্রায়।

আদরের শিশু সন্তানের জন্য ‘গল্প পড়ি জীবন গড়ি’সহ বেশ কয়েকটি বই কিনে মেলা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন মীর মাসুদ আলী জিতু  ও ফারজানা জান্নাত তুলি দম্পত্তি।

কিন্তু ফারিস্তা জান্নাত গো ধরেছে, সে মেলা থেকে বের হবে না।  নিজেই সবগুলো বই নিজেই বহন করবে! বাবা মা’র কোলে উঠবে না। হেঁটে যাবে! তাও আবার বাইরের দিকে নয়; হাঁটবে সে মেলার দিকে।  

জিতু-তুলি দম্পতি এবং তাদের প্রিয় সন্তান ফারিস্তা জান্নাত জেরিনের এই খুনসুটি দেখতে লোক-জনের ভিড়। কয়েকজন সংবাদমাধ্যম কর্মী সংবাদের উপকরণ সংগ্রহে ছবি এবং নোট নিতে ব্যস্ত। এরই মধ্যে কথা হয় মীর মাসুদ আলী জিতুর সঙ্গে।

উত্তর বাড্ডা সাতারকুল থেকে মেলায় আসা জিতু বলেন-ছুটির দিন রাস্তা ফাঁকার সুবিধা নিতে পরিবারসহ মেলায় এসেছি। কিন্তু মেলা খুব একটা জমে ওঠেনি। খুব বেশি লোক যেমন বিরক্তিকর। আবার ফাঁকা মেলাও খুব একটা ভালো লাগে না।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার মুখেই ‘কথা প্রকাশের’ চার ইউনিটের স্টল। লম্বা আকৃতির এই স্টলে প্রায় ১৫ জন বিক্রয়কর্মী বই বিক্রির জন্য প্রস্তুত। কর্মকর্তাও আছেন দুই/তিন জন। যদিও মেলার চতুর্থ দিন কথা প্রকাশের নতুন কোনো বই আসেনি মেলায়।

কেমন চলছে মেলা? বিক্রি কেমন?-কথা প্রকাশের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. ইউনুস আলীকে এ প্রশ্ন করতেই চেহারায় এক রাশ মেঘ জমিয়ে বলে ওঠেন, বেচা-বিক্রি তেমন না। গতকাল (শুক্রবার) মনে হয়েছিল মেলা জমে গেছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে মেলা জমতে আরো সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে।
অমর একুশে বইমেলার চিত্র;ছবি- কাশেম হারুন

শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত মেলায় দর্শনার্থী, লেখক, প্রকাশক, ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি দেখে আদতেই মনে হয়েছে মেলা জমতে আরো সময় লাগবে। শনিবার ছুটির দিন হলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি মেলায়।

তবে লোকজন যা আসছে তারা মোটামুটি বই কিনছেন। ভালো বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোতে বই বিক্রিও হতে দেখা গেছে বেশ! যদিও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়।

কথা প্রকাশের সেলস এক্সিকিউটিভ জাফরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন- চার ইউনিটের এ স্টল বরাদ্দ পেতে ভ্যাটসহ পে করতে হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা। সাজ-সজ্জা সব মিলে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ৭৫ লাখ টাকার বই বিক্রি করতে পারলে তবেই লাভের মুখ দেখব। অন্যথায় লস!

অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৯টি বইয়ের। সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে মেলা শেষ হয় রাত সাড়ে ৮ টায়। শনিবারও সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশু প্রহর।

শনিবার ছিলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের চতুর্থ ও শেষ দিন। এদিন সকাল ১০ টায় আব্দুল করিম সাহিত্য বিশরদ সেমিনার কক্ষে অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অনুবাদক অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সেলিম। সভাপতিত্ব করেন কবি নুরুল হুদা।

দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩ টায় মূলমঞ্চে শিশু কিশোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। আলোচনায় অংশ নেন আলী ইমাম, রফিকুর রশীদ ও লুৎফর রহমান রিটন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।

রোববার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩ টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮ টা পযর্ন্ত। গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আহসান হাবীবের জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এজেড/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।